19 April 2024

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা হতে পারে হাকালুকি হাওড়

Share

আশরাফ আলী:
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওড় হাকালুকি। হাকালুকি হাওড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে শীত বর্ষা মৌসুমে বাড়ে পর্যটকের সংখ্যা। হাওড়ের এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকের মন ভরে যায় এই দৃশ্য দেখে। তবে হাওড় কে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসলে যেমনি বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা তেমনি বাড়বে সরকারের রাজস্ব। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগণ পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এগিয়ে যাবে হাকালুকি হাওড়ের পর্যটন।
এদিকে একটি মহল প্রতি বছর হাওড়ের বিল শুকিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট করছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর অভিযান পরিচালনা করছে না।
জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও দেশের অন্যতম মিটা পানির মৎস্যভান্ডার খ্যাত হাকালুকির আয়তন ১৮.১১৫ হেক্টর। হাওরে দিন দিন কমছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হাকালুকিতে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ থেকে বর্তমানে ৪৪ প্রজাতি-ই বিলুপ্ত। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন, প্রজননের সময় অবাধে মৎস্য শিকার, অভয়াশ্রমের অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব দেশীয় মাছ।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর ও হাওরের প্রতিবশে এবং জীব বৈচিত্র নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কাজ করা বেসরকারি এনজিও সংস্থার তথ্যমতে, দেশের মৎস্যভান্ডার খ্যাত হাকালুকিতে সরকারি ২৩৮টি বেসরকারী ৩৮টি বিল রয়েছে। এ হাওরে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিলো। যা বিলুপ্ত হতে হতে বর্তমানে ৬৩ টি প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় ৪৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম হলো চিতল, পাবদা, রানী মাছ, আইড়, চাপচেলা, মেনী মাছ, বাঁশপাতা, গুজি আইড়, দেশী সরপুঁটি, ফেনী মাছ, বাতাসি ও বাঁশাপতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সুস্বাদু মাছ।

সরজমিনে শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হাকালুকি হাওড়ে গেলে কথা হয় স্থানীয় অনলাইন পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক সাইফুল্লাহ হাসানের সাথে। তিনি বলেন, হাকালুকি হাওড় প্রকৃতির অপরুপ এক নিদর্শন। হাওড়ের দৃশ্য যে কারও মন জুড়াবে। পরিযায়ী পাখি আকাশে উড়ার দৃশ্য কত সুন্দর তা বলে বুঝানো যাবে না।
তিনি বলেন, প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন হাকালুকি হাওড়ে। বর্ষায় বিশাল জলরাশির মধ্যে ভেঁসে থাকা হিজল-করচ বন, আবার শীত মৌসুমে হিজল-করচ-তমালের নিচে গা ছমছমে গুল্মলতা আরোং এর বিশাল ঝোঁপ-জঙ্গল। পরিকল্পিত ভাবে হাকালুকির উন্নয়ন হলে সরকারের রাজস্বর পাশাপাশি স্থানীয়দের অনেক কর্মসংস্থান হবে।
হাকালুকিতে ঘুরতে আসা শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, হাওড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা দেশি-বিদেশী পর্যটককে জানাতে পারলে এখানে বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বেশি প্রয়োজন।
হাকালুকি হাওড়ে শুক্রবার জুড়ী রিপোর্টাস ইউনিটি বনভোজনে যায়। সেখানে কথা হয় রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি মো. মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, হাওড়ে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক যান। কিন্তু সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।

মৌলভীবাজার আধুনিক ট্যুরিজম এন্ড ট্রাভেলস এর স্বত্ত্বাধিকারী আশরাফ আলী বলেন, পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে হাকালুকি হাওড়ে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বিল থেকে অবাধে মাছ আহরণ বন্ধ করতে হবে। বর্ষা মৌসুমী হাওরে বেড়ানোর জন্য উন্নত মানের নৌকার ব্যবস্থা করা জরুরি। আর বাহিরের পর্যটকদের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে ভাবে কয়েকটি পয়েন্টে রেষ্ট হাউজ করলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, হাকালুকি হাওড়ের পর্যটন নিয়ে নিয়ে আমাদের মাষ্টার প্লান রয়েছে। হাওড়ের জীববৈচিত্রকে রক্ষা করে কিভাবে পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে ট্যুরিজম বোর্ড। আশাকরি শীঘ্রই সেই পরিকল্পনাটি প্রকাশ করা হবে।