আবিদ হোসাইন::
এক সারিতে ছয়টি কবর। কবরগুলো একই পরিবারের ছয় সদস্যের। যেন তারা স্ব-পরিবারে বাড়ির বদলে ঘুমিয়ে আছেন কবরস্থানে। সাহরি খেয়ে তারা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন শত স্বপ্নে বুনা আপন ঘরে। মুহুর্তেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে পরিবারের পাঁচ জন এবং ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরে ১ জনের মৃত্যুতে সবাই আজ মাটির নিচে।
এমন এক দুর্ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী ভাঙ্গারপার গ্রামে। ২৬ মার্চ ভোরে তাদের ঘরের উপর ঝুলে পড়ে ১১ হাজার কেভি ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালিত তার। ঘরের চাল-বেড়া সবই ছিলো টিনের, মুহুর্তে আগুনের ঝলকে ছেয়ে যায় ঘর। বাড়ির কর্তা ছিলেন বাক প্রতিবন্ধী, নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচাতে বেরোতে চেয়েছিলেন ঘরের বাহিরে। ঘর থেকে বের হওয়ার পথই থামিয়ে দিলো তাদের, কারণ স্টিলের দরজায় চলে এসেছিলো বিদ্যুৎ।
এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাকপ্রতিবন্ধী দিনমজুর ফয়জুর রহমান (৫০), স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া সুলতানা (১৪), দ্বিতীয় মেয়ে সাবিনা আক্তার (১১) ও পরিবারের একমাত্র ছেলে সায়েম আহমদ (৭)। লাশের ভিড়ে পড়ে ছিলো পরিবারের আরেক শিশু। নড়তে দেখা গেলে জুড়ী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান আত্মীয়-স্বজনরা। এ যাত্রায় বেঁচে যায় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া সুলতানা (৮)। পরে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন, সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে বুধবার ভোর ৫ টার দিকে মৃত্যুবরণ করে সোনিয়া।
বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর ২ টায় হাজী ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশেই তাকে দাফন করা করা হয়। সোনিয়ার মৃত্যুর মাধ্যমে এই পরিবারের আর কোন সদস্য জীবিত নেই।