বিশেষ প্রতিবেদক::
গ্রামবাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মৌলভীবাজার পৌরসভার আয়োজনে এবারও মনুনদে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি নেছার আহমদ।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে রাজনগরের বরগাঁও গ্রামের কাবুল ইসলামের নৌকা শাহ মোস্তফার, দ্বিতীয় হয়েছে দিশালোকের সুমন তরফদারের নৌকা ও তৃতীয় হয়েছে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ের শাহ পরানের তরী।
এসময় দেখা যায়, নৌকা বাইচ উপভোগ করতে মনুনদের দুপাড়ে হাজারো দর্শকের ভিড় জমে। এ বছর শান্তিবাগ এলাকায় নদের পাড়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করায় দর্শকদের সুবিধা হয়। নৌকা বাইচের আয়োজনকে উপভোগ করতে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে শহরের আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে এসেছেন। এসময় মনুনদের দু’পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
কুলাউড়া উপজেলা থেকে আসা গৃহবধু নাজমা আক্তার জানান, বাবার বাড়িতে এসেছি নৌকা বাইচ দেখার জন্য। স্বামী, সন্তানকে সাথে নিয়ে এসেছি। আজ অনেক মজা হলো।
এ এক মনোমুগ্ধকর নির্মল আনন্দের খোরাক। যান্ত্রিক এই আধুনিকতায় বাঙালির এই লোকসংস্কৃতি হারাতে বসেছে জানিয়ে শহরের শান্তিবাগ এলাকার প্রবাসী জিল্লুর আহমদ বলেন, দীর্ঘ পঁচিশ বৎসর পর নৌকা বাইচ দেখলাম। এবার দেশে আসা স্বার্থক হয়েছে।
শহরের প্রবীণ ব্যক্তি শৈলেন রায় বলেন, আবহমান বাংলার রূপ বৈচিত্র্যের বাংলার মধ্যে সিলেট অঞ্চলের মানুষ কৃষ্টি ধারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে আমরা নানা রকম লোককৃষ্টি ভুলে গিয়ে জীবনযাত্রায় এনেছি অনেক পরিবর্তন, হয়েছে বিবর্তন। আগের মত আমাদের নৌকাবাইচ জমে উঠে না। এইসব ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরা উচিত।
মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর পার্থসারথী পাল ও সালেহ আহমদ পাপ্পু জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এ জেলার মনু নদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। শহরের মনুনদের চাঁদনীঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে নৌকা বাইচ শুরু হয়ে শেষ হয় বড়হাট বলিয়ারভাগ খেয়াঘাট এলাকায়। এ বাইচের ১ম পুরস্কার একটি মোটরসাইকেল, ২য় পুরস্কার একটি ফ্রিজ ও ৩য় পুরস্কার একটি টেলিভিশন।
পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা পৌরসভার উদ্যোগে আবারো শুরু হয়েছে। এখন থেকে আমরা প্রতি বছরই এ ধারা অব্যাহত রাখবো।
তিনি জানান, নদী দূষণমুক্ত রাখতে ও নদী রক্ষায় এ ধরনের আয়োজন খুবই প্রয়োজন। নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিযোগিতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নদী রক্ষায় তারা আরও সচেতনতায় উদ্যোগী হবে বলে তিনি জানান।