ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব অবসান করে ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৃহৎ দেশ সৌদি আরব ও ইরান। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেছিলেন দু’দেশের সরকারি কর্মকর্তারা। শুক্রবার সেই বৈঠকে এ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা।
ইরানের বার্তাসংস্থা ইরনা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(বেইজিংয়ে বৈঠকের পর) ইরান এবং সৌদি আরব উভয়ই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী দু’মাসের ফের দূতাবাস চালু করবে দুই দেশ।’
ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ শুক্রবারের বৈঠকের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। সেখানে দুই দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই’কেও দেখা গেছে।
এক বিবৃতিতে দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সিও (এসপিএ)। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ইস্যুতে পরস্পরকে সহায়তা করতে ২০০১ সালে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল সৌদি আরব ও ইরান, তা ফের কার্যকর করার ব্যাপারেও একমত হয়েছেন দু’দেশের কর্মকর্তারা।
শিয়াপন্থী মুসলিম অধ্যুষিত ইরানের সঙ্গে সুন্নিপন্থী সৌদি আরবের সম্পর্ক কখনো তেমন উষ্ণ ছিল না। তবে ২০১৬ সালে দুই দেশের সম্পর্কের গুরুতর অবনতি ঘটে।
ওই বছর সৌদিতে এক শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।
ওই ঘটনার পর পরই ইরানে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় সৌদি। জবাবে ইরানও সৌদিতে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে। পরবর্তী বছরগুলোতে ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননে চলমান গৃহযুদ্ধে রীতিমতো মুখোমুখী অবস্থান গ্রহণ করে সৌদি ও ইরান— যা দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও বৈরী করে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে সৌদি ও ইরান— উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বৃহৎ এ দুটি দেশ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এতদিন হুমকির মুখে ছিল।
আলজাজিরার সংবাদ বিশ্লেষক আলী হাশিম এ সম্পর্কে বলেন, ‘গত দুই বছরে বাগদাদে ৫দফা বৈঠক হয়েছে ইরান ও সৌদির সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে, কিন্তু সেসব বৈঠক থেকে কোনো ফলাফল আসেনি।’
‘দুই দেশের মতপার্থক্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এতদিন হুমকির মধ্যে ছিল এবং তাদের এই বৈরিতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী দুই দেশ ইয়েমেন ও লেবানন। বেইজিংয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে হয়েছে— ইরান ও সৌদি যদি তা মেনে চলে…মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সেটি খুবই ইতিবাচক একটি ব্যাপার হবে।’