

স্টাফ রিপোর্টার::
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা এলাকায় অবস্থিত শাহ নিমাত্রা (রহ.) এর মাজারে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ওরস। ওরসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভক্তরা মাজারে সেজদা দিচ্ছেন, আগরবাতি ও মোমবাতি প্রজ্বলন করছেন। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, মাজারে সেজদা দেওয়া শিরকি এবং অনৈসলামিক কাজ।
শাহ নিমাত্রা (র.) এর মাজারে শুক্রবার ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তিন দিন ব্যাপী ওরস। ওরসকে কেন্দ্র করে অনৈসলামিক কাজ এবং এগুলো বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ করে আসছে জুড়ীর তৌহিদি জনতা। শুক্রবার উপজেলা শহরের কয়েকটি জায়গায় ওরসে অনৈসলামিক কার্যক্রমের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।
ওরস নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে দুটি গ্রুপের অবস্থান উত্তেজিত করে তুলে। বৃহস্পতিবার গুঞ্জন উঠে ডিসি ওরস বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। একপক্ষ ওরস বন্ধ এবং অন্যপক্ষ ওরসের কার্যক্রম করতে মিছিল করে। এই নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে একপক্ষের দাবি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ওরস শুরু হয়।
শনিবার রাতে শাহ নিমাত্রার মাজারে গিয়ে দেখা যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় মানুষের সংখ্যা খুব একটা নেই। তবে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত আশেকান বৃন্দ মাজারে এসে দান দক্ষিণা দিচ্ছেন। মাজারের ভিতরে ঢুকে দেখা যায় কেউ মাজার জিয়ারত করছেন আবার অনেকেই মাজারে সেজদা দিচ্ছেন। আগরবাতি ও মোমবাতি প্রজ্বলন করছেন।
মাজারের ভিতরে ঢুকার আগে কয়েকজনকে দেখা যায় চাঁদা তুলতে। মাইকে চাঁদার বিবরণও দিচ্ছেন। শিরণীর ডেগে টাকা দিতেও কয়েকজনকে দেখা যায়। মাজারে ঢুকার আগে পুলিশের কয়েকজনকে চোখে পড়ে। সেখানে তারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে আছেন বলে জানান তারা।
জুড়ীর নয়াবাজার ষোলপনী ঈদগাহের ইমাম মাওলানা সায়েম উদ্দিন বলেন, মাজারে সেজদা দেওয়া শিরকি এবং অনৈসলামিক কাজ। আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দিলেও শিরকের গুনাহ মাফ করেননা। আর এটা হচ্ছে শিরকে আকবর। স্পষ্ট শিরক। যেটা দেখা যাচ্ছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিরক যে করছে, এর আয়োজন যারা করছে, এটাকে যারা সমর্থন করছে প্রত্যেকেই এই অপরাধে অপরাধী হবে। আমরা ওরসের নামে এই সকল কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোন পীর, ওলি-আউলিয়ার বিরোধী নই। আমরা এই সমস্ত শিরক, বেদাত, গাযা, মদ, জুয়া, নারীবাজি এইসবের বিরোধী। এই সব কাজ ইমান বিধ্বংসী। এই সমস্ত কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত রাখতে আমরা প্রতিবাদ করে আসছি।
ফুলতলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও মাজার কমিটির দায়িত্ব থাকা ইমতিয়াজ গফুর মারুফ বলেন, অনুমতি পেয়েই আমরা ওরস শুরু করেছি। আমরা ওরসের প্রস্তুতি নেওয়ার পর কিছু মানুষ আমাদের বরাবর দরখাস্ত দিয়েছে ওরসে নারী-পুরুষ এক জায়গায় মিলে নাচ-গান বেহায়াপনা বন্ধ করার জন্য। আমরা তাদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে এই সকল কার্যক্রম বন্ধ করেছি। পরে তারা আবার ওরস টোটাল বন্ধ করার জন্য ডিসি বরাবর আবেদন করেছে।
তিনি বলেন, পরে আমরাও ডিসি বরাবর আবেদন করেছি। ডিসি পারমিশন দিয়েছেন। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক আছে, পুলিশ আছে। আমাদের এখানে কোন ধরণের নাচ-গান-বাজনা নেই।
মাজারে সেজদা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনদিনও মাজারে সেজদা দিতে দেইনা। বিষটি আমাদের নজরে আসে নি। বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে এটা প্রতিহত করার চেষ্টা করবো।
মারুফ বলেন, মাজারে মিলাদ শরীফ হয়, কুরআন খতম হয়, জিকির আযকার হয়, শিরণী বিতরণ হয়।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহি অফিসার বাবলু সূত্রধর বলেন, ওরস হচ্ছে। বর্তমানে কোন সমস্যা নেই। আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন।