23 April 2025

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

মৌলভীবাজারে আইনজীবি হত্যা: ফুচকার দোকান গুড়িয়ে দিল আইনজীবিরা

Share

স্টাফ রিপোর্টার::

মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী এডভোকেট সুজন মিয়াকে (৩৮) হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল মৌলভীবাজারের আইনজীবি সমাজ। সোমবার (০৭ এপ্রিল) সকালে আদালত বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। দুপুরে জেলা জজ আদালত থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পৌর শহরের চৌমূহনা ঘুরে পৌরসভার সামনে আসলে সংক্ষুব্ধ আইনজীবিরা ফুচকার দোকানে ভাংচুর করেন। এসময় বেশ কয়েকটি ফুচকার দোকান ভাংচুর করেন তারা।

এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজার পৌর শহরের জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের সরকারি বাস ভবণের সামনে ৫-৬ জনের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন আইনজীবি সুজন মিয়া। পৌরসভা ভবণের সামনে ফুচকার দোকানের সামনে আইনজীবি হত্যার ঘটনা ঘটে। মূলত ফুচকার দোকানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। কিশোর গ্যাং কে বিভিন্ন সময় বাহিনী নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় এখানে। এবং তারা গ্রæপে বিভক্ত হয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন দিতেও দেখা যায়। আইনজীবিদের দাবি হচ্ছে এই কিশোর গ্যাংয়ের কোন দুর্বৃত্তরা সুজন মিয়াকে হত্যা করে পালিয়েছে।

মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ বলেন, অ্যাডভোকেট সুজন মিয়াকে পৌর শহরের ফুচকার দোকানে আড্ডা দেওয়া দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি রাস্তার পাশে অবৈধ গড়ে উঠা ফুচকার দোকান, যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করে আড্ডার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সহকর্মী সুজন মিয়ার খুনিদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় মৌলভীবাজারের আইনজীবিরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুজন মিয়ার খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মৌলভীবাজার চৌমূহনা পর্যন্ত কে বা কারা এই ফুচকার দোকান বসিয়ে অবৈধ ফায়দা হাসিল করছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আগামীতে এই সমস্ত অহেতুক আড্ডা, মাদকবাজি, মাদক ব্যবসা, ফুচকার ব্যবসা, অস্বাস্থ্যকর এই খাদ্য আমাদের ছাত্রসমাজ, জনসমাজকে যেন পরিবেশন না করা হয় সেই বিষয়টি প্রশাসন, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।

অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ আরও বলেন, গুড়িয়ে দেওয়া ফুচকার দোকান যদি আবার চালু হয় তাহলে জেলা আইনজীবির সদস্যবৃন্দরা আরো কঠোর পদক্ষেপ নিবে। আমাদের সহকর্মীরা সংক্ষুব্ধ, আমরা কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এগুলো আবার চালু হলে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলা হবে।

জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট নিয়ামুল হক বলেন, গতকাল রাতে এই ফুচকার দোকানে দুর্বৃত্তরা আমাদের সহকর্মীকে নির্মমভাবে খুন করেছে। এই হত্যার প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছি। আমরা প্রশাসনকে বার্তা দিতে চাই আমাদের আল্টিমেটামের মধ্যে প্রশাসন খুনিদের গ্রেপ্তার করবে। জনসম্মুখে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন চাইলে আসামীদের দ্রæত খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করতে পারবে। যদি আমাদের আল্টিমেটামের মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তার করা না হয় আমরা আজকে আদালত বর্জন করেছি প্রয়োজনে লাগাতার কোর্ট বর্জন করবো। এবং আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

তিনি বলেন, মৌলভীবাজারশ শহর শান্তি প্রিয় শহর। এখানে কোন কিশোর গ্যাং ছিল না। হঠাৎ  করে কেন এই ঘটনা ঘটলো? সবাই বলতেছে এটা কিশোর গ্যাংয়ের ঘটনা। আমার চাইনা এই শহরে কোন কিশোর গ্যাং গড়ে উঠুক। কোন সন্ত্রাসী কায়দায় এই শহরে কোন নেতৃত্ব গড়ে উঠুক এটা আমরা চাইনা। কোন অপরাধী গড়ে উঠুক বা প্রশ্রয় দেওয়া হোক সেটা কামনা করিনা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সহকর্মী ভাইয়েরা সংক্ষুব্ধ হয়ে গেছে। এটা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা চাই এই ফুচকার দোকান যেগুলো বসানো হয়েছে সেগুলো যেন আর না বসে। যদি আবার বসে পরবর্তীতে জনতা বা আমাদের সংক্ষুব্ধ ভাইয়েরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তাহলে আমরা এর দায় নেব না।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। হত্যার মোটিভ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি।

প্রসঙ্গত, রোববার রাতে রাতে মৌলভীবাজার পৌর শহরের জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের সরকারি বাস ভবণের ফুচকার দোকানে সামনে ছিলেন এডভোকেট সুজন মিয়া। সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কিশোর গ্যাংয়ের ৫-৬ জনের দুর্বৃত্তদল তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটি জানা যায়নি।  এডভোকেট সুজন মিয়া মৌলভীবাজার পৌর শহরের পূর্ব হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মো. জহিরুল ইসলামের ছেলে।