12 July 2025

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

চাবাগানের ভিতরে মনোমুগ্ধকর লেক, পর্যটকের ভাষায় মিনি সাজেক

Share

স্টাফ রিপোটার::

চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগান। চাবাগানের ভিতরে মনোমুগ্ধকর লেক। দেখে মনে হয় সুন্দরী অপ্সরী নেমে এসেছে। এখানে যে কেহ আসলে দেখতে পাবে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ। পাখির কলকাকলিতে চারিদিক পরিপূর্ণ। পাখির এই কলকাকলি নিয়ে আসে অন্যরকম অনূভূতি। লেকটি চারদিক চাবাগান দ্বারা বেষ্টিত। চাবাগানের উঁচু জায়গায় লাল টিনের চাল, নেই কোন বেড়া। চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। একটু দূরের পাহাড় দেখে মনে হয় আকাশের নীল এসে যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে। তার মধ্যে লাল সবুজের পতাকার মতো লাল বৃত্তের জায়গাটা পূরণ করে লাল টিনের গোলাকার বেড়াবিহীন দুইটি ঘর। যা প্রকৃতি প্রেমী যে কারও দৃষ্টি কাড়ে।

লেকটির অবস্থান কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগানের ১০ নাম্বার সেকশনে। লেকটির চতুরদিক চাবাগান দ্বারা বেষ্টিত। দুই প্রান্তে কাঠ ও লাল টিন দিয়ে তৈরী দুইটি ঘর। পাহাড়ের বুক চিরে লেক। যা সৌন্দর্য্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ঘর দুটিতে বসে নীল আকাশের নীচে প্রকৃতির অপূর্ব রুপ দেখা যায়।
লেকটিতে যেতে চাবাগানের অপরুপ সৌন্দর্যের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বাগানের ভেতর উঁচু পাহাড়ে চা শ্রমিকদের চায়ের পাতা তুলতে দেখা যায়। আর দেখা যায় ঝরা পাতায় রাবার বাগানের অপরূপ দৃশ্য। রাস্তায় পাওয়া যায় বানরের দল, গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফাচ্ছে। বানর (মা) তার ছোট বাচ্চাকে পিঠের ওপর বসিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানুষকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। এ যেন সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক বাস্তব উদাহরণ।

সবুজের গালিচা বিছান চাবাগানের অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী যে কারও মনকে আন্দোলিত করবে। সবুজ চায়ের ঘ্রাণ মনটাকে প্রফুল্ল করে তুলবে। তখন মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠবেন ‘ও পাহাড়িয়া মন, ও বাগানিয়া মন…।’

সেখান থেকে ছোটবড় সবুজ পাহাড় দেখতে বেশ ভালোই লাগে। স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়া, পশ্চিমে রক্তিম আকাশ আর পাহাড়ের নির্মল সবুজ মিলেমিশে একাকার। পাহাড় থেকে ভেসে আসে নানান প্রজাতির পাখির কাকলি। এ  যেন এক স্বপ্নের দেশ! এই সৌন্দর্যের রাজ্যে না হারিয়ে উপায় নেই। এখানে কখন যে সময় গড়িয়ে যায়, তার হিসাব থাকে না। হিসাব রাখার দরকারও পড়ে না। প্রথমবার গিয়ে মনে হবে অনন্তকাল থাকা যাবে এমন পরিবেশে।

কথা হয় ঘুরতে আসা আবিদ হোসাইনের সাথে। তিনি বলেন, এখানে আমি প্রথম এসেছি। এখানে আসার পর মনে হচ্ছে আসাটা বৃথা যায়নি। যতদূর রাস্তা পার হয়ে এসেছি আমি সফল। এখানকার দৃশ্য তাতে আমার বন্ধুদের সাজেক বলে চালিয়ে দিতে পারবো। লেক এবং চাবাগানের কম্বিশনে দারুণ একটি জায়গা।

তিনি বলেন, শীতের মৌসুম থাকায় এখানকার রাস্তা অনেক ভালো। লেকে আসতে চাবাগান, রাবার বাগানসহ লাল গালিচা বিছানো রাস্তা বুঝা যায়। অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য এখানকার। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। জায়গাটি উপভোগ করেছি। এখানে আগামীতে আবারও আসার চিন্তা ধারা আছে বন্ধুদের নিয়ে।

শুভ গুয়ালা নামের আরেক পর্যটক বলেন, আমার বাড়ি থেকে লেকটি কাছে থাকায় সময় পেলে এখানে ঘুরতে আসি। এখানের দৃশ্য অত্যান্ত মনোরম। পাখির কোলাহল, লেক, এটা সচরাচর দেখা যায়না। এটা অনেক বড় লেক। এই লেকটি অন্যান্য লেকের চাইতে আরও সুন্দর।

তিনি বলেন, লেকের পাশ দিয়ে বড় বড় পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে কোয়াশা জড়ানো দৃশ্য দেখে মনে হয় এটা মিনি সাজেক। অনেকেই সাজেকে যেতে পারে না। তারা এখানে এসে সাজেকের ফিল (অনুভব) নিতে পারে।

সেখানকার কর্তব্যরত কয়েকজন গার্ডদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লেকটি খনন করা হয়েছে চারা গাছে পানি দেওয়ার জন্যে। তবে জায়গাটি এখনও সবার জন্যে উন্মুক্ত করা হয়নি।

পরিবেশপ্রেমী ও সাংবাদিক কামরান আহমদ বলেন, ‘দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর স্থানগুলো। পাহাড়, টিলা, বন কেটে উজাড় করা হচ্ছে। এসব জায়গাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের তৎপর হতে হবে। নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে। এরকম কাজ না করলে একসময় প্রাকৃতিক স্থানগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।