স্টাফ রিপোর্টার::
ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০২৪ সাল শেষ। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইংরেজি নতুন বছর ২০২৫ সাল। ফলে চলতি বছরের হিসেব নিকেশ শুরু হয়েছে। এই বছরে যুক্ত হয়েছে কিছু আনন্দ, বেদনা ও উত্তেজনার খবর। অনেক ঘটনা মৌলভীবাজারবাসীর মনে দাগ কেটেছে। ঘটনাগুলো নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বছরজুড়ে সারাদেশের মতো মৌলভীবাজার জেলায় বেশ কয়েকটি ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে বসতবাড়িতে আগুন লেগে একই পরিবারের ৬জন নিহতের ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। আলোচিত এই ঘটনায় নিহত হন বাক প্রতিবন্ধি ফয়জুর রহমান, স্ত্রী শিরিন বেগম, তিন কন্যা সামিয়া, সাবিনা, সোনিয়া ও একমাত্র ছেলে সায়েম উদ্দিন। আগুনের ঘটনায় একই পরিবারের সকলেই মারা যান। এরকম ঘটনা মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাসে কোন সময় ঘটেনি। ২০২৪ সালের ২৬ মার্চ ভোরে সেহরীরর কিছুক্ষণ পরে ঝড়ের সময় বৈদ্যুতিক লাইনের তার ছিড়ে ঘটনাটি ঘটে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় জুড়ী তথা মৌলভীবাজার জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।
কুলাউড়া সীমান্তে কিশোরী স্বর্ণা দাশ হত্যা: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাশের নিহতের খবরটি দেশ এবং বিদেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। কিশোরী স্বর্ণা দাশ মায়ের সাথে গত ১ সেপ্টেম্বর ভাইকে দেখতে দালালের মাধ্যমে ভারতে যাবার জন্য সীমান্তে গেলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ নিয়ে যায়। ঘটনার দুইদিন পর চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশী পুলিশের কাছে স্বর্ণার লাশ হস্তান্তর করে।
ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যা: ভারত থেকে নেমে আসা উজানী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার সবকটি উপজেলা প্লাবিত হয়। ২০২৪ সালে ৪ দফা বন্যায় পতিত হয় মৌলভীবাজার জেলা। প্রথম দফা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলা। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা বন্যা হয়। সর্বশেষ চতুর্থ দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, সদর ও জুড়ী উপজেলা। ৪ আগস্ট চতুর্থ দফা বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় রাজনগর উপজেলা। রাজনগর উপজেলায় বন্যার পানি এরকম জায়গায় পৌছেছিল যে এলাকায় কোন দিন বন্যা হয়নি সেসব এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। যার জন্য কয়েক লক্ষ মানুষ ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বাড়িঘর তলিয়ে গিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করে। বন্যায় মৌলভীবাজার জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার। বাড়িঘর হারায় কয়েকশত পরিবার।
ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা: জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাটি জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ৩ আগস্ট জুড়ীতে হামলা হয় ছাত্র-জনতার উপর। ৪ আগস্ট জেলা শহরে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে। স্বাধীনতার পর মৌলভীবাজারের ইতিহাসে এতো দীর্ঘ সময় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেনি কখনো। এদিন ছাত্র-জনতার সাথে আওয়ামীলীগ সহ পুলিশের হামলা শুরু হয় দুপুর ১২টার কিছু সময় পর থেকে যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
আওয়ামীলীগের পতনে আনন্দ উল্লাস: ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনে সারাদেশের মতো মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় সাধারণ জনতা নেমে আসে রাজপথে। সাধারণ জনতা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। সবার মুখে ছিল আনন্দের হাসি।
রিসোর্ট থেকে অতিরিক্ত সচিবের মরদেহ উদ্ধার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্ট থেকে ১০ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালাউদ্দিন মাহমুদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। সালাউদ্দিন মাহমুদ এসএমই ফাউন্ডেশনের সরকারি কাজে মৌলভীবাজার এসে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্টে ওঠেন। ১০ অক্টোবর সকালে সরকারি একটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও তার রুমে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া না পেয়ে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়। পুলিশ বিকল্প পথে রুমে প্রবেশ করে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ধর্ষণের পর দুই জনের মৃত্যুদÐ: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে ২ জনের ফাঁসির আদেশ দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা করা হয়। দুই জনের ফাঁসির রায়ের এই ঘটনাটি জেলাজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়।
এই ঘটনাগুলো ছাড়াও ২০২৪ সালে আরও বেশ কিছু ঘটনা মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে আলোচিত হয়। তবে সবার প্রত্যাশা নতুন বছর ২০২৫ সাল বয়ে আনবে নতুনত্ব। সবার সবকিছু হয় যেন প্রত্যাশার আলোকে।