22 December 2024

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মৌলভীবাজারে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন হবে শনিবার

Share

স্টাফ রিপোর্টার::

দেশ স্বাধীনের পর প্রথমবারের মতো মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আয়োজনে আগামী শনিবার (২১ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে কর্মী সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে পোস্টার, লিফলেট, মাইকিং, প্রচার মিছিল, মিটিং, প্রচারপত্র, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সম্মেলনকে সফল করতে জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মানুষের কাছে যাচ্ছেন। সকল নেতা ও কর্মী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের কর্মী সম্মেলনকে সামনে রেখে। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নিজ জেলা হওয়ায় ব্যাপক প্রচরাণা চলছে। সাধারণ মানুষের আগ্রহ জন্মেছে এই অনুষ্ঠান ঘিরে।

মৌলভীবাজার জেলা জামায়াত সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে উন্মুক্ত মৌলভীবাজারে এরকম কোন সম্মেলন হয়নি। প্রথমবারের মতো খোলা মাঠে সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জনে জনে দাওয়াত পৌঁছানো হচ্ছে শনিবারের সম্মেলনের। ধারণা করা হচ্ছে এই সম্মেলনে লক্ষাধীক মানুষের সমাগম হবে। সম্মেলন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হবে দুপুর ১টায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগের নেতৃবৃন্দ।

বুধবার মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতের সম্মেলন স্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্টেইজ বাঁধার কাজ চলছে। পাশাপাশি বিরাট প্যান্ডেলের কাজও চলমান। মাঠের বড় অংশ জুড়ে সামিয়ানা বাধা হচ্ছে। লক্ষাধীক মানুষের উপস্থিতি হলেও প্যান্ডেলের ভিতরে ১০ হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা হচ্ছে। সেখানে জেলা জামায়াতের বেশ কিছু নেতাকর্মী সম্মেলনের কাজ পরিদর্শনের পাশাপাশি তদারকি করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

সেখানে কথা হয় কবি বদরুল আমিন চৌধুরী সুফির সাথে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার মানুষের মাঝে স্বস্ফূর্ততা দেখা দিয়েছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে সবশ্রেণীর মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে। এই সম্মেলনটি মৌলভীবাজারে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্বে থাকা মৌলভীবাজার পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সম্মেলনকে সফল এবং সার্থক করতে জামায়াতের প্রত্যেক ইউনিট কাজ করছে। লক্ষাধীক মানুষের জন্য সম্মেলন স্থল প্রস্তুত করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারের প্রত্যান্ত অঞ্চল, পাড়া-মহল্লায় সকল মানুষ উজ্জীবিত।

সম্মেলনের ডেকোরেশনের দায়িত্বে থাকা মৌলভীবাজার সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ডেকোরেশনের কাজ প্রায় সমাপ্তির দিকে। টুকটাক কিছু কাজ আছে যা কালকের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। আমরা আশা করছি একটি সুন্দর কর্মী সম্মেলন মৌলভীবাজারবাসীকে উপহার দিতে পারবো। আমরা মানুষের যে পরিমাণ আগ্রহ দেখছি এখানে লক্ষাধীক মানুষের সমাগম ঘটবে।

তিনি বলেন, নিরাপত্ত¡ার জন্য মাঠের চতুরদিকে আমাদের সাপোটিং থাকবে। এবং মানুষ যাতে নির্বিগ্নে এখানে এসে উপভোগ করতে পারে এই জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে, স্টল থাকবে, পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে, আমাদের শৌচাগার থাকবে। বলা যায় আমরা সুন্দর পরিবেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্ত¡া দিয়ে আমাদের প্রোগ্রামটি করতে পারবো।

মৌলভীবাজার পৌর জামায়াতের আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম বলেন, জেলার প্রত্যেকটি এলাকায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমেজ বিরাজ করছে। কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সম্মেলনে লক্ষাধীক মানুষের সমাগম ঘটবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমীরে জামায়াত কথা বলবেন।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী বলেন, সম্মেলনকে সফল করতে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্র মিছিল, মিটিং, মাইকিং, প্রচারপত্র সবগুলো ব্যাপকভাবে বিতরণ হচ্ছে। আমরা আশাবাদী দলমত নির্বিশেষে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি হবে। সর্বস্তরের জনগণকে আহবান জানাচ্ছি আমীরে জামায়াত মৌলভীবাজার জেলার কৃতি সন্তান। প্রকাশ্যে আমীরে জামায়াতের প্রথম প্রোগ্রামে দলমত নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করুন।

মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালের পর কর্মী সম্মেলন হচ্ছে। আমরা গর্বিত আমাদের জেলার কৃতি সন্তান আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এখানে এসে জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ কথা রাখবেন। আমীরে জামায়াতের আগমন উপলক্ষে মৌলভীবাজারবাসী উজ্জীবিত। গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যান্ত অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী বলেন, ৫৩ বছর পর মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলন হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ ১৭ বছরের জুলুম নির্যাতন, নিষ্পেষণ এর পাশাপাশি সারা দেশের মতো মৌলিক কথা বলার অধিকার হারিয়ে ছিলাম। এরকম উন্মুক্ত পরিবেশে জেলার সকল মানুষের মাঝে আগ্রহ উচ্ছাস বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পোস্টার, লিফলেট, মাইকিং, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ সহ প্রচার-প্রচারণা চলছে। ২১ তারিখের সম্মেলনে যোগ দিতে জেলাবাসী উদগ্রীব হয়ে আছে।

তিনি বলেন, দেশের সংস্কারের জন্য আমরা একটি পরিবর্তনশীল বাংলাদেশ দেখতে চাই। আগামী দিনের পরিবর্তশীল বাংলাদেশের জন্য আমাদের সম্মেলন একটি মাইলফলক ভূমিকা রাখবে। দেশবাসী এই সম্মেলন থেকে উজ্জীবিত হয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলী পাবে এখান থেকে।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি একটি কুচক্রী মহল বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র করছে। দেশের জনগণ চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এবং রক্ত চক্ষুকে বরদাশত করবে না। আর এই ষড়যন্ত্রকারীদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণ পূনর্বাসন করবে না। এই সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে জনগণ আমাদের সম্মেলনে যোগ দিবে।