ফটোনিউজবিডি ডেস্ক::
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিনরা জুমার খুতবায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে মুসল্লিদের সচেতন করলে তা ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) চসিক পাবলিক লাইব্রেরি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মেয়র।
ডা. শাহাদাত বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মূল অস্ত্র হলো সচেতনতা। আলেম সমাজের সদস্যরা মসজিদে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করলে সাধারণ জনগণ তা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। বিশেষ করে প্রতি জুমার খুতবায় খতিব সাহেবরা যদি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন তা জনগণ অনুসরণ করবে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা যদি ক্লাস নেওয়ার সময় ছাত্রদের ডেঙ্গু বিষয়ে বলেন তাহলে ছাত্ররা সচেতন হবে। সমাজের কল্যাণে ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম সমাজকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
টিকার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আলেমদের সহায়তা চেয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে নারী শিশুদের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে এ টিকা নিতে তিন হাজার টাকা লাগে, অথচ আমরা বিনামূল্যে দিচ্ছি। কুকুরের কামড়ে আক্রান্তদেরও ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। মেমন হাসপাতালে বিনামূল্যে এনএসওয়ান ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন। এসব বিষয়ে আপনারা মানুষকে সচেতন করলে চট্টগ্রামকে হেলদি সিটি করতে পারব আমরা।
তিনি উল্লেখ করেন, ডেঙ্গুর কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছে এবং এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত বাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, বালতি, টায়ার এবং এসির পানির ট্রেতে পানি জমতে না দেওয়া। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এনএসওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষা সেবা চালু করা হয়েছে এবং ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মেমন হসপিটালে বিশেষায়িত ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্পোরেশনের মশা নিধনের জন্য উন্নত ওষুধ এবং স্প্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। মশক নিধনের নতুন মস্কুবান সলিউশন প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব এবং মশা নিধনে কার্যকর।
বাংলাদেশিদের ধর্মভীরু উল্লেখ করে ডা. শাহাদাত আলেম সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা ধর্মভীরু জাতি। আমরা আলেম-ওলামাদের অনেক সম্মান করি। আলেম-ওলামারা কোনো কথা বললে তা মানুষ অনেক মনোযোগের সঙ্গে, গুরুত্বের সঙ্গে শুনে। আপনারা যদি পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলোর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কের দিকটি মুসল্লিদের ব্যাখ্যা করে বলেন তা মুসল্লিদের মনে স্থান করে নেবে। আপনারা মসজিদে মুসল্লিদের কাছে এই বার্তাগুলো পৌঁছে দেবেন এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন। আপনারা এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন, কারণ সাধারণ জনগণ আপনাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং অনুসরণ করে। আমরা সবার সহযোগিতায় একটি ডেঙ্গু মুক্ত চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে চাই।
আলেম-ওলামা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র। সভার পর তিনি আলেম-ওলামাদের সঙ্গে নিয়ে লালদীঘি এলাকায় লিফলেট জনসচেতনতামূলক বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের আলেম-ওলামারা। চসিকের মাদ্রাসা পরিদর্শক মাওলানা হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মাওলানা আমানুল্লাহ।
সভা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আবদুস সোবহান ভূঁইয়া।