স্টাফ রিপোর্টার::
বিএসএফের গুলিতে নিহত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার স্বর্ণা দাসের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াত। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নিহত স্বর্ণা দাসের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কাছে এই আর্থিক সহায়তা তুলে দেন জেলা জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ নিহত স্বর্ণার পরিবারের খোঁজ খবর নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার এম শাহেদ আলী, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আলাউদ্দিন শাহ, জুড়ী উপজেলা আমীর হাফেজ নাজমুল ইসলাম, উপজেলা নায়েবে আমীর আব্দুল হাই হেলাল, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি লুৎফর রহমান আজাদী, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি এ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসাইন, সেক্রেটারি আশরাফুল ইসলাম, সহ: সেক্রেটারি সাজিদ মাহমুদ, আহমদ আলী, শহিদুল হক কুনু, ইউপি সদসম্য মদন মোহন দাশ ও আব্দুল হেকিম বাবুল।
ইউপি সদস্য মদন মোহন দাশ জানান, স্বর্ণা মামার বাড়ি যাবার পথে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। সে স্থানীয় নিরোধ বিহারী স্কুলে পড়ালেখা করতো। মারা যাবার এক দিন পর আমাকে বলা হয় গাড়ি নিয়ে গিয়ে সীমান্ত থেকে লাশ আনার জন্য। তারপর লাশ নিয়ে এসে দাহ করি। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। তারা (বিএসএফ) চাইলে গুলি না করে জেলে নিতে পারতো। তারা কাস্টুরিতে না নিয়ে সরাসরি গুলি করে একটা মেয়েকে মেরে ফেলল। এটা কতটা যুক্তিযুক্ত?
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, জুড়ীবাসী নয় পুরো বাংলাদেশ স্বর্ণা দাশের ঘটনায় মর্মাহত। আমরা সকল ধর্মের মানুষ একই সাথে বসবাস করি। আমাদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আমাদের অনেক আতœীয়-স্বজন ভারতে রয়েছেন তাদের অনেককে দেখতে ভারতে যাওয়া আসা হয়। কেউ যদি অবৈধ অনুপ্রবেশ করে রাষ্ট্রীয় আইন আছে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। একজনকে গুলি করে মেরে ফেলবে এটা কোন ধরণের কথা? এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এটির জন্য আন্তর্জাতিক আইনে বিচার দাবি করছি। এবং ভবিষৎতে যাতে এই রকমের কোন ঘটনা না ঘটে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার এম শাহেদ আলী বলেন, আমরা স্বর্ণা দাসের ঘটনার খবর শুনে সাথে সাথেই খোঁজ নেই। আমি জেলা আইনশূঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে এটার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছি। এবং বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার প্রশাসনকে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, সীমান্তের ফেলানী থেকে স্বর্ণা হত্যাকাÐ এই ধরণের কোন হত্যাকাÐ চাইনা। মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ মানুষকে এভাবে হত্যা করতে পারেনা। স্বর্ণা একজন মেয়ে মানুষ, সে চোরাকারবারি নয়, অসৎ নয়, সন্ত্রাসী নয়। কেন তাকে এভাবে হত্যা করা হবে? সে তার মামার বাড়িতে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল। এটা তার অপরাধ?
তিনি আরও বলেন, আমাদের যদি কোন প্রদক্ষেপ থাকতো তাহলে সীমান্তে এরকম ঘটনা ঘটতো না। আমাদের কার্যকরি কোন উদ্যোগ নেই। আবার পাশ^বর্তী রাষ্ট্র পাখির মতো গুলি করে হত্যা করবে এই অধিকার তারা পেল কোথায়? একটা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সবাই দাবি রাখে। বন্ধুত্বপূর্ণ নিদর্শন এটা নয় যে বুলেট দিয়ে মানুষ হত্যা করা হবে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত দিয়ে মায়ের সাথে অবৈধভাবে ভারতে যাবার পথে বিএসএফের গুলিতে ঘটনাস্থলে মারা যায় স্বর্ণা দাস। গত ০১ সেপ্টেম্বর রাতে সীমান্ত এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। স্বর্ণা জুড়ী উপজেলার পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোধ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল।