16 September 2024

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক

Share

ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:

ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন সালমান এফ রহমান। ‘দরবেশখ্যাত’ এই ব্যক্তির নামে গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি করে দেশে টাকা না আনার অভিযোগও রয়েছে তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে। আর এভাবেই কামিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। আসলে তিনি কত টাকার মালিক তার প্রকৃত হিসাব কারো কাছেই নেই।

২০০৬-২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ঋণখেলাপিসহ নানা অভিযোগে জেলে গিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। এরপর জেল থেকে বের হয়ে নাম জড়ান ২০১০-১১ সালের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে। এতকিছুর পরও তাকে স্পর্শ করার সাহস হয়নি কারও।

গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে। ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি ব্যাংক থেকেই নেওয়া হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। পণ্য রপ্তানি করে টাকা দেশে না আনার অভিযোগও রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। বিশ্বস্ত সূত্র আর নির্ভরযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জানা গেছে- গেল ৩১ বছরে শেয়ারবাজারের প্রত্যেকটি বড় কেলেঙ্কারিতে সালমান এফ রহমান জড়িত। গেল ৩ বছরে তিনি দৃশ্যমানভাবেই বাজার থেকে নিয়েছেন ৬৬০০ কোটি টাকা। আর অদৃশ্যভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ হাজার কোটি টাকা।

মূলত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একদম বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সালমান এফ রহমান। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবসায়ী নেতার পর ২০১৮ সালে এমপি ও টানা দুইবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন তিনি। হাজারো ব্যবসায়ীকে পথে বসানো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির এক অবিচ্ছেদ্য নাম সালমান এফ রহমান। ২০১০-১১ সালে শেয়ার বাজার ধসের পর এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। সেই রিপোর্টে পুঁজিবাজারে ফিক্সড প্রাইস, বুক-বিল্ডিং, রাইট শেয়ার, ডিরেক্ট লিস্টিং, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, প্রেফারেন্স শেয়ারসহ সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম হওয়ার এবং এর সঙ্গে সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তাই খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সেই রিপোর্টে সালমান এফ রহমান থেকে পুজিবাজারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

এছাড়া সালমান এফ রহমান বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও প্রমাণ পায় সেই কমিটি। অথচ এসব অনিয়মের সঙ্গে সালমান এফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের নাম জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

২০০৬-০৭ সালের দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী একটি টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। টাস্কফোর্স বিভিন্ন দেশে অনুসন্ধান চালিয়ে তথ্য বের করেন যে, ১২২ জন রাজনৈতিক নেতা ও আমলা দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ মোট ১৭টি দেশে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। পাচার হওয়া ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা সালমান এফ রহমানের। আমেরিকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে এসব টাকা পাচার করা হয়েছিল।

সূত্র: ঢাকাপোস্ট