21 November 2024

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

শেখ হাসিনার পতনের খবর ভারতের গণমাধ্যম যেভাবে দেখছে

Share

ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:

কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে প্রতিবেশি ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের তিনবারের প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রীর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে উঠে এসেছে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার এই ঘটনা।

দেশটির রাজধানী দিল্লি থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকগুলোর আজকের শীর্ষ শিরোনাম বাংলাদেশ নিয়েই। চারটি জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’, ‘দ্য হিন্দু’, ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এবং ‘হিন্দুস্তান টাইমস’র শীর্ষ শিরোনাম অনেকটা একরকম।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার বিষয়টিকে সব কাগজের শীর্ষ শিরোনামে ‘পলায়ন’ বলে লেখা হয়েছে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘Shaken Hasina Flees, Army In Charge’। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শিরোনাম, ‘Hasina falls, flees, Army takes Dhaka’।

দ্য হিন্দু শীর্ষ খবরটির শিরোনাম দিয়েছে, ‘Hasina quits, flees Bangladesh, lands in India as protests surge’। হিন্দুস্তান টাইমসের শিরোনামও অনেকটা একই ধরনের। তারা লিখেছে, ‘Hasina Flees Bangladesh’।

সবকয়েকটি ইংরেজি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেই এক বা একাধিক ছবি ছাপা হয়েছে। তিনটি কাগজের প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে গণভবনের মাথায় বহু মানুষ চড়েছেন। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’র ছবিগুলোর একটিতে দেখা যায়, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে উঠছেন আর অন্য ছবিটি ঢাকার রাস্তায় সেনা টহলের।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ সংক্রান্ত খবর। একটি বড় ছবির ওপরে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘হাসিনার পতন’। শীর্ষ খবরটির শিরোনাম ‘সেনার হাতে বাংলাদেশ’।

ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‌‌প্রায় পাঁচ দশক আগে আগস্টের এক সকালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের একাধিক সদস্য। সেই সময়ে বাংলাদেশে ছিলেন না মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। সোমবার আবার আগস্টের দুপুর। গণআন্দোলনের অভিঘাতে দ্রুত বদলে যাচ্ছিল ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেনাপ্রধান ওয়াকর-উজ-জামান পদত্যাগের জন্য সময় বেধে দেন। এরপরই ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন হাসিনা, সঙ্গে বোন রেহানা।

এর পাশাপাশি ঢাকার প্রথম আলোর পলিটিক্যাল এডিটর কাদির কল্লোলের একটি বিশ্লেষণও আছে। সেটির শিরোনাম ঘরে-বাইরে একা হয়ে পড়েছিলেন মুজিব কন্যা। এই লেখাটিতে কাদির কল্লোল বলেছেন, সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হলো একনায়ক হিসেবে। ছাত্র ও গণআন্দোলেনর মুখে তার শাসনের পতনের পেছনে একগুঁয়েমি, অহংকার এবং আত্মবিশ্বাসকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের আরেক দৈনিক বর্তমানের শিরোনাম হয়েছে, ‘তাণ্ডব জামাতপন্থীদের, ইস্তফা দিয়েই ভারতে পাড়ি হাসিনার, সেনার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ’।

সেখানে লেখা হয়েছে, মাত্র চারদিনের আন্দোলনেই পতন হলো বাংলাদেশ সরকারের। পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৭ সালের পর আবারও ওপার বাংলায় ক্ষমতা গেল সেনাবাহিনীর হাতে। সেবার ছিল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে অশান্ত পরিস্থিতি। আর এবার কোটাবিরোধী আন্দোলনের জের। কলকাতার আরেকটি সংবাদপত্র ‘আজকাল’ আট কলামজুড়ে শীর্ষ শিরোনাম করেছে, এখন সেনার বাংলাদেশ, দেশ ছাড়লেন হাসিনা।

ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যেখানে দেখা যায, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি মূর্তি ভাঙার চেষ্টা করছে জনতা। এছাড়া সংবাদপত্রটি দ্বিতীয় শিরোনাম করেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে ‘এখানে শান্তি নষ্ট না হয় : মুখ্যমন্ত্রী’।

এতে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের ঘটনার কথা শুনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের শান্তি নষ্ট হতে পারে, এমন কাজ করবেন না। তার বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির কয়েকজন নেতা নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। আমি আমার নেতাদেরও বলব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন পোস্ট করবেন না।

সংবাদ প্রতিদিন কাগজের প্রথম পাতায় মোট তিনটি শিরোনাম রয়েছে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। প্রথম প্রতিবেদনটি সোমবার ঢাকার ঘটনাবলীর বিবরণ। দ্বিতীয়টির শিরোনাম ‘‘হাসিনার গণভবনে তাণ্ডব, লুট।’’

তৃতীয়টির শিরোনাম ভারতের অবস্থান নিয়ে। ‘মেপে পা ফেলছে সাবধানী দিল্লি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, প্রতিবেশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে চাপ বাড়ল নয়া দিল্লির ওপর। একদিকে, ‘বন্ধু’ শেখ হাসিনাকে নিরাপদে ভারতে আনা গেলেও তাকে ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যেমন ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দিয়েছিলেন, এবারও তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিবিসি বাংলা।