ইসরাইলে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিযান চালিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী বাহিনী হামাস। পালটা আক্রমণে ভয়ংকর হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলও। ভূমধ্যসাগরের দুই উপকূলীয় ভূখণ্ড ইসরাইল-গাজার সংঘাতের ইতিহাস বেশ পুরোনো।
গত ৭৫ বছরে প্রায় প্রতিদিনই এই ‘দুই শরিকের’ দ্বন্দ্বে কেঁপে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের গোটা আরব ভূখণ্ড। তবে গত শনিবার (৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া দুই আজন্ম শত্রুর নজিরবিহীন রণহুঙ্কারে রীতিমতো ফাটল ধরেছে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে।
পশ্চিমা শক্তির জাদুটোনায় চোখ-কান বন্ধ করে গোপনে ইসরাইলের জন্য কাঁদছে এক পক্ষ। আরেক পক্ষ বুক টান করে দাঁড়িয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আবার বাতাস বুঝে পা ফেলছে মধ্যপ্রাচ্যের এই মুসলিম বলয়েরই বেশ কয়েকটি দেশ-সৌদি আরব, কাতার, মিসর এবং আরব আমিরাত।
তবে দিন শেষে ফিলিস্তিনের পাল্লাই ভারী। মতানৈক্যে অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই এখন গাজাবাসীর পক্ষে। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
ঐতিহাসিকভাবেই ইসরাইলের প্রতিপক্ষ মিসর। প্রাথমিকভাবে দুই দেশের মধ্যে তিক্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক দেখা যায়। পরবর্তীতে, ১৯৭৯ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য মিসর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। তবে ধারাবাহিকভাবে দেশটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকে। সম্প্রতি দেশটি ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে। মিসরীয় জনগণ অবশ্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
ইসরাইলের সঙ্গে যে দুটি আরব দেশের শান্তিচুক্তি রয়েছে তার মধ্যে জর্ডান অন্যতম। ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি সত্ত্বেও, জর্ডান সর্বদাই ফিলিস্তিনপন্থি।
ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তু জনসংখ্যার প্রতি তাদের সহানুভূতিশীল অনুভূতি রয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেও জর্ডান সরকার প্রায়ই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে।
ইরান সমর্থিত শিয়া মতাদর্শী হিজবুল্লাহ বাহিনীর ঘাঁটি। হিজবুল্লাহ বাহিনীর কারণেই সারা বছর টানটান উত্তেজনায় থাকে লেবানন-ইসরাইল সীমান্ত।
হামাসের মতো ইসরাইলের সঙ্গে একাধিকবার যুদ্ধ করেছে হিজবুল্লাহও। ফলে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এ সামরিক বাহিনীটির অবস্থান বেশ দৃঢ়। পাশাপাশি লেবানন সরকারের ইসরাইলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
সিরিয়া এবং ইসরাইলও ঐতিহাসিকভাবে একে অপরের প্রতিপক্ষ। সিরিয়া সবসময়ই ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে। এরপর কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির সিরিয়ায় অবস্থান করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সরাসরি সংঘর্ষ সীমিত হয়েছে। তবে সিরিয়া তার সরকারী নীতি এবং বক্তৃতায় ইসরাইলবিরোধীই থেকে গেছে।
ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরবের ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। সৌদি আরব সর্বদাই ফিলিস্তিনের কট্টর সমর্থক ছিল। তবে সম্প্রতি ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক অনেকটাই শিথিল হয়েছে।
সৌদি একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক রাখছে। অন্যদিকে চলমান সংঘাতে সৌদি আরব সরকার দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সমর্থনে রয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ২০২০ সালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল।
অর্থনৈতিক কারণে ইসরাইলের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে দেশটি এখনো ফিলিস্তিনি সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং একটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বাহরাইনও ২০২০ সালে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। তবে বাহরাইন সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায়ের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি অধিকারের জন্যও ঐতিহাসিক সমর্থনের ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বে প্রায়ই দ্বৈত ভূমিকা পালন করে। একদিকে, এটি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। অন্যদিকে হামাসকে সমর্থন করে।
গাজা উপত্যকায় দেশটি আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। কাতার প্রায়ই সংঘর্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে।
ইরানের সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে গঠিত হয়েছে হামাস। দেশটি হামাসকে তাদের তহবিল, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে থাকে। ইসরাইলের প্রতি ইরানের প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও মতাদর্শ সাম্প্রদায়িক পার্থক্য হামাস এবং ইরানেও বিদ্যমান।
হামাস প্রধানত সুন্নি, যেখানে ইরান শিয়া। যদিও এই সাম্প্রদায়িক প্রার্থক্যগুলো তাদের সহযোগিতাকে বাধা দেয়নি; তবে মাঝে মাঝে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এ অভিযানে ইরানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টিকে পুরোপুরি অস্বীকৃতি জানায় দেশটি।