রাজধানীর পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির আগামীকালের (বুধবার) জনসমাবেশ ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। সমাবেশের আগের দুদিন রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ব্যানার ও বিলবোর্ড ছিঁড়ে ভেঙে ফেলে একদল দুষ্কৃতকারী। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে ওইসব ব্যানার তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দুটি রাজনৈতিক দলেই কিছুটা উত্তেজনা আছে। এ অবস্থায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় পুলিশ।
সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার ত্রৈমাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আল মামুন। এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনসমাবেশ ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় মৎস্যভবন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোড়, গুলিস্তান, জিপিও মোড় এবং আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে টানানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এসব ব্যানারে ‘পৈশাচিক বিএনপির বাংলাদেশ। ২০০১-২০০৬, এমন ভয়াল সময় যেন আর ফিরে না আসে’ লেখা ছিল। মঙ্গলবার সকালে শাহবাগ মোড়েও আওয়ামী লীগের বিলবোর্ড ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনসমাবেশে যেন বাধা না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সমাবেশ ঘিরে ডিএমপির ক্যামেরাম্যানরা তৎপর থাকবে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেসবের ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও করে রাখবেন ক্যামেরাম্যানরা। উঁচু ভবন থেকে পুলিশ সদস্যরা জনসমাবেশে কড়া নজর রাখবেন। পুলিশ সদর দপ্তরে অবস্থান করে আইজিপি ও ডিএমপি সদর থেকে পুলিশ কমিশনার সমাবেশ মনিটর করবেন। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেবেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো সমাবেশের আগেই আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। জনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং অপরাধ তৎপরতা রোধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সবই নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে পুলিশ পেশাদারিত্ব ও আইনানুগ দায়িত্ব পালন করবে। তিনি আরও বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তা দিতে ডিএমপি সব সময় প্রস্তুত। যে কোনো সমাবেশের আগেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এবারও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জনসমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং অফিস-আদালত চালু রাখাসহ নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা নাশকতা করবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।