ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
সেনা অভ্যুত্থানের শিকার নাইজারকে জোট থেকে বহিষ্কার করেছে আফ্রিকার দেশগুলোর জোট আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)। জোটের নীতি নির্ধারণী সংস্থা দ্য পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের সুপারিশ আমলে নিয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে এইউ।
এইউ’র এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যতদিন নাইজারে সামরিক শাসন জারি থাকবে, ততদিন এই বহিষ্কারাদেশ জারি থাকবে। বেসামরিক সরকার ফিরলেই কেবল এই আদেশ প্রত্যাহার করা হবে।’
‘বহিষ্কারাদেশের পাশাপাশি নাইজারের বর্তমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনের জন্য একটি স্ট্যান্ডবাই কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেছে পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল,’ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন ওই কর্মকর্তা।
পশ্চিম আফ্রিকার সাহিল অঞ্চলের দেশ গত নাইজারে গত ২৬ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর এলিট ফোর্স প্রেসিডেনশিয়ল গার্ড। বাহিনীর প্রধান কর্নেল মেজর আমাদু আবদারামান এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোয়াস) এই প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং তা এইউকে সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই নিয়ে ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত প্রায় ৩ বছরে দারিদ্র্য ও খরা কবলিত সাহিল অঞ্চলের চতুর্থ দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটল। নাইজারের আগে গত ৩ বছরে এই অঞ্চলের তিন দেশ বুরকিনা ফাসো, গিনি এবং মালিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে।
নাইজারের সাম্প্রতিক এই অভ্যুত্থান পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে যুদ্ধ-সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। কারণ বুরকিনা ফাসো এবং মালিতে ক্ষমতাসীন দুই সামরিক সরকার আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল যে প্রতিবেশী কোনো দেশে সামরিক অভ্যুত্থান তারা ব্যাপারটিকে তাদের দেশের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে বিবেচনা করবে।
এছাড়া সাহিল অঞ্চলে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। নাইজারের সেনা অভুত্থান ওই অঞ্চলে তাদের বিকাশের জন্য সহায়ক হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
১৯৬০ সালে ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর নাইজারে এই নিয়ে মোট ৫ বার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটল।
২০২১ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে নাইজারের প্রেসিডেন্ট হন মোহামেদ বাজুম। এর মাধ্যমে নাইজারে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে সামরিক বাহিনী থেকে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে গৃহবন্দী রয়েছেন মোহামেদ বাজুম। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যে তার মুক্তি দাবি করে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে।