ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
পাকিস্তানের ৮ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশের সাবেক সিনেটর আনোয়ার-উল-হক কাকার। সোমবার ইসলামাবাদের আইওয়ান-ই-সদরে দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সাবেক মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা, সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানিসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শপথগ্রহণের পর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ ও করমর্দন করেন দেশটির নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকা। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখন তার প্রথম কাজ হবে নির্বাচনের সময় দেশ পরিচালনার জন্য মন্ত্রিসভা গঠন।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক এবং এই পদের জন্য সম্ভাব্য পছন্দের প্রার্থীদের বিষয়ে কয়েক দিনের জল্পনা-কল্পনার পর শনিবার কাকারকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রোববার এক বিবৃতিতে দেশটির আগামী নির্বাচন কাকার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, কাকারের প্রতি সব পক্ষের আস্থা তাদের প্রধানমন্ত্রী বাছাই করার কাজ যে সঠিক ছিল, সেটি প্রমাণ করেছে। কারণ দেশের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী একজন শিক্ষিত এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক।
এর আগে, মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার তিন দিন আগে (৯ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরামর্শে পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ (এনএ) ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ার-উল-হক কাকারের নাম ঘোষণা করা হয়। তার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশটির আগামী সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করবে।
কাকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে দেশটির বিদায়ী সরকার শেষের দিকে নতুন আদমশুমারির অনুমোদন দেওয়ায় এখন নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সাবেক একজন কর্মকর্তার মতে, ২৪ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশটির শত শত ফেডারেল ও প্রাদেশিক নির্বাচনী আসনে নতুন সীমানা নির্ধারণে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, এই কাজ শেষ করতে কত সময় লাগবে তা নির্বাচন কমিশনকে ঘোষণা করতে হবে। কারণ নির্বাচনী আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রার্থীরা মামলা-মোকদ্দমাও করতে পারেন। এর ভিত্তিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিতে হবে।
কে এই কাকার?
২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন কাকার। দেশটির অত্যন্ত সক্রিয় একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার পরিচিতি আছে। সংসদের উচ্চকক্ষে নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামিদ মীর জিও নিউজকে বলেছেন, রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও কাকারকে দেশের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
মীর বলেন, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) এই আইনপ্রণেতা পশতুন জাতিগোষ্ঠীর কাকার উপজাতির সদস্য। যে কারণে তিনি পশতুন ও বালুচ— উভয় গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব করেন।
‘দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও ভাল সম্পর্ক রয়েছে আনোয়ারুল হক কাকারের।’
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল কিউ-লীগের টিকিটে কোয়েটা থেকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কাকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কাকার বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।
পাকিস্তানের সিনেটের প্রবাসী ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও সিনেটের ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটি, অর্থ ও রাজস্ব, পররাষ্ট্র এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
কাকার ২০১৮ সালে সিনেটে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির সংসদীয় নেতার দায়িত্বও পালন করেন। পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য দলটির সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাঁচ মাস আগে দলটি নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যার ফলে তার স্থলাভিষিক্ত হন নতুন নেতা।
সূত্র: ডন, জিও টিভি, রয়টার্স।