ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
১৯৮০’র দশকের পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন (এসএসবিএন) মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার সাথে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে তার জবাব সমন্বিত উপায়ে দেওয়ার বিষয়ে মিত্রদের আলোচনার মাঝেই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র এই সাবমেরিন মোতায়েন করেছে।
গত এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ সম্মেলনের সময় যৌথ এক ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণার পর কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি প্রত্যাশিতই ছিল।
হোয়াইট হাউসের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বয়কারী কার্ট ক্যাম্পবেল মঙ্গলবার সিউল সফর করেছেন। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, আজ দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান বন্দরে আমেরিকান একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নোঙর করেছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনও পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিনের উপস্থিতি।
সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সাথে নিউক্লিয়ার কনসালটেটিভ গ্রুপের (এনসিজি) প্রথম আলোচনায় যোগ দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা।
উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির মুখে গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টরা বেশ কয়েকটি চুক্তিতে পৌঁছান। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা দ্বিপাক্ষিক এনসিজি প্রতিষ্ঠা ও সামরিক মহড়া বৃদ্ধির বিষয়েও রাজি হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে বুসান বন্দরে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ইউএসএস কেন্টাকি সাবমেরিন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি জং-সুপ সাবমেরিন মোতায়েনের এই ঘটনাকে মিত্রদের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রসহ সম্পূর্ণ সামরিক সক্ষমতা ব্যবহার করার যে অঙ্গীকার করেছে, তারই বাস্তবায়ন বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, সাবমেরিন মোতায়েন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মিত্রদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রদর্শন।
১৯৭০’র দশকের শেষের দিকে স্নায়ুযুদ্ধের সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায়ই পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন মোতায়েন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় এমনকি মাসে দুই থেকে তিনবারও দক্ষিণ কোরিয়ায় সাবমেরিন মোতায়েন করতো ওয়াশিংটন। তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত শত পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে কোরীয় উপদ্বীপ থেকে সব ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঘিরে উত্তর কোরিয়ার নতুন জরুরি অবস্থা তৈরি করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে সংঘাতের সময় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার হুমকি দিয়েছেন। গত বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন বলেছেন, তার দেশের পারমাণবিক যুদ্ধের সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।