ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে প্রথম ইনিসে ১৫৫ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে আইরিশরা দুই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে ১৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল। এমন ধসের পরও ম্যাচের তৃতীয় দিনশেষে চালকের আসনে আইরিশ দল। দিনশেষে ১৩১ রানের লিড নিয়ে তারা দারুণ অবস্থানে। শুক্রবার সকালে আরও কিছু রান করতে পারলে স্বাগতিকদের সামনে সফরকারীরা দারুণ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে। ফলে দিন শেষে বাংলাদেশ যেখানে অস্বস্তিতে, আয়ারল্যান্ড সেই জায়গায় ঢাকা টেস্টে সুবিধাজনক অবস্থানে।
অথচ খুব বেশি দিন হয়নি আয়ারল্যান্ড টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের পর থেকে কোন প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেনি তারা। যেহেতু দেশটিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কোন কাঠামোও তৈরি হয়নি। সেটাই শুধু নয়, ঢাকা টেস্টের এই ম্যাচে ৬ ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও বেশির ভাগেরই তা নেই। সেই নবীন আয়ারল্যান্ডই বাংলাদেশ শেখাচ্ছে কীভাবে আঁকড়ে থাকতে হয়; প্রভাব বিস্তার করতে হয় টেস্ট ক্রিকেটে।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুটা হয়েছিল অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। আগের দিন শেষ বিকালে দ্রুত চার উইকেট তুলে নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখছিল। সেই একই বোলাররা ম্যাচের তৃতীয় দিন হয়ে থাকলেন বাক্সবন্দী। নতুন-পুরনো কোন বলেই প্রভাব ফেলতে পারেননি। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও বল হাতে সাকিবকে ‘নাটক’ করতে দেখা গেছে। অথচ আগের দিন বোলিংয়ের শুরুটা করেছিলেন তিনিই। ৬ ওভার বল করে ১১ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।
বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে অধিনায়ক বোলিংয়ে আসেন ১৮তম ওভারে। টানা ৩ ওভার বোলিং করেই হাওয়া হয়ে গেছেন। ৪৭ তম ওভারে এসে একটি মাত্র ওভার করে ফের গেছেন বিরতিতে। আবার আসেন ৮৩তম ওভারে। এক ওভার করে ৯০তম ওভারে আরও একটি এক ওভারের স্পেল শেষ করেন তিনি। অথচ মাঠে বেশিরভাগ সময় উপস্থিত থাকলেও সাকিবের বোলিং না করার কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডও জানেন না কেন টেস্ট অধিনায়ক বল করেননি।
হয়তো এমনটা হতে পারে- সাকিব নিজে বল না করে বাকি দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজের ওপরই আস্থা রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু দিনটি যে কোনওভাবেই বাংলাদেশের ছিল না। সাফল্য এনে দিতে পারেননি তারা। পঞ্চম উইকেটে গড়া পিটার মুর ও হ্যারি টেক্টরের ১৫৪ বলে ৩৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙতে পারছিলেন না কেউই। দলীয় ১২২ রানে তাইজুলের বলে পরাস্ত হয়ে মুর ফিরলে আবার ৭২ রানের জুটি গড়েন লরকান টাকার ও হ্যারি টেক্টর। এরপর অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও লরকান টাকারের ১১১ রানের জুটি, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও মার্ক অ্যাডায়ারের ৩১ রানের জুটির পর গ্রাহাম হিউম ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অবিচ্ছিন্ন ২১ রানের জুটিতে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ড। ইতোমধ্যে এগিয়েও গেছে ১৩১ রানে। ঘরের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১০১ রানে চেজ করে জয়ের ইতিহাস আছে। দেশের বাইরেও যদিও সেটি ২১৫ রানের। শুক্রবার দিনের শুরুতেই সফরকারীদের অলআউট করতে না পারলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে সাকিব আল হাসানদের।
এটা বলা যায় বাংলাদেশের বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সুযোগটা খুব ভালো করেই নিয়েছে আইরিশ ব্যাটাররা। আগের ইনিংসে সাফল্য পাওয়া তাইজুল ৩৮ ওভার বল করে নিতে পেরেছেন চারটি উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান আগের দিন ৬ ওভারে ২ উইকেট নিলেও আজ ৭ ওভার করে উইকেট শূন্য ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে টেস্টে দারুণ বোলিং করে আসা মিরাজ আইরিশদের বিপক্ষে ছিলেন ছন্নছাড়া। ২৮ ওভার বোলিং করে ৫৮ রান দিয়েও উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। তিন পেসার খালেদ, শরিফুল ও এবাদত খুব বেশি কার্যকরী ছিলেন না। সাফল্য পাওয়া যায়নি অনিয়মিত বোলার মুমিনুলকে দিয়েও।
তবে বাংলাদেশের বোলারদের ব্যর্থতা পাশে রেখে আইরিশ ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতেই হবে। বৃহস্পতিবার নিজের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা লরকান টাকার প্রথম ইনিংসেও খেলেছিলেন ৩৭ রানের ইনিংস। চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে টাকার ও হ্যারি টেক্টর সবশেষ লাল বলের ক্রিকেট খেলেছেন সেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। লম্বা সময় পর মাঠে নেমেও দারুণ সাবলীল ছিলেন তারা। এদিন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু জুটিতে তাদের অবদান ছিল। টাকার পেয়েছেন অভিষেক টেস্টের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৬২ বলে ১৪ চার ও ১ ছক্কায় তিনি ১০৮ রানের ইনিংস খেলেছেন।
অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে ৫০ করা টেক্টর দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলেছেন ৫৬ রানের ইনিংস। তাদের পর এখন সেঞ্চুরির অপেক্ষাতে আছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন (৭১)। শেষ পর্যন্ত তার দারুণ ব্যাটিংয়ে চড়েই বড় লিডের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আইরিশরা।
এমন অস্বস্তিকর দিন পেরিয়ে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ নির্ঘুম রাত কাটাবে। তার মধ্যে আইরিশ ব্যাটার হ্যারি টেক্টের এই টেস্টে জয়ের কথা শুনিয়ে গেছেন। শুক্রবার দিনের শুরুতে প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে না পারলে অনুমিতভাবেই ম্যাচ জেতা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে স্বাগতিদের জন্য।