ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে সহিংসতা কমানোর অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েলি সরকার এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ক্রমবর্ধমান সহিংসতার অবসানে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একটি যৌথ প্রতিশ্রুতিও ঘোষণা করেছে উভয়পক্ষ।
জর্ডানের মধ্যস্ততায় দেশটিতে অনুষ্ঠিত বিরল আলোচনা থেকে এই পদক্ষেপ দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে মার্কিন এবং মিশরীয় কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জর্ডানে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটিতে আস্থা-প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন করতে এবং ‘একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কাজ করতে’ সম্মত হয়েছে সব পক্ষ।
আলোচনা চলাকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী দুই ইসরায়েলিকে গুলি করে হত্যা করে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বন্দুকধারীর পিছু নিচ্ছে এবং পশ্চিম তীরে মোতায়েন সৈন্য সংখ্যা আরও শক্তিশালী করছে। পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সেখানে অতিরিক্ত আরও দুই ব্যাটালিয়ন সেনা মোতায়েন করে।
ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, নাবলুসের নিকটবর্তী হাওয়ারা গ্রামে নিহতদের মধ্যে একজন সৈনিক ছিলেন। ইসরায়েলের সরকার হাওয়ারায় হত্যাকাণ্ডকে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বর্ণনা করেছে।
এদিকে রোববারের এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বসতি স্থাপনকারীদের একটি বড় দল একই গ্রামে প্রবেশ করে এবং পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পরে তারা সেখানকার গাছ ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ফিলিস্তিনি সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ১৫টি বাড়ি ও বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু পরিবারকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, এই ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন।
পশ্চিম তীরের কাছাকাছি জা’তারায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং সৈন্যরা গ্রামে প্রবেশ করার সময় একজন ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন।
বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক মারাত্মক সহিংসতা বৃদ্ধির পর আকাবার লোহিত সাগরের রিসোর্টে শীর্ষ এই সম্মেলন ডাকা হয়। কারণ সাস্প্রতিক এই সহিংসতা একটি বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। এর মধ্য দিয়ে বহু বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা প্রধানরা একত্রিত হন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের শীর্ষ মধ্যপ্রাচ্য উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাকগার্কও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ সম্মেলনের বিবৃতির প্রথম পয়েন্টটিতে বলা হয়েছে: ‘দুই পক্ষ (ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি) তাদের মধ্যে পূর্ববর্তী সমস্ত চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির দিকে কাজ করার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘তারা সেখানে উত্তেজনা কমাতে এবং আরও সহিংসতা রোধ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে।’
বিবৃতি অনুযায়ী, ইসরায়েল চার মাসের জন্য নতুন বসতি নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না বলে মনে হচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া পাঁচটি পক্ষ আগামী মাসে মিশরের শার্ম আল-শেখ-এ আরও আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, তিনি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য একইভাবে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ে তুলতে আগামী মাসগুলোতে আরও কাজ করা দরকার।’
তবে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, ‘বসতিতে নির্মাণ ও উন্নয়ন স্থগিত হবে না, এমনকি একদিনের জন্যও নয়’। তিনি আরও বলেছেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সীমাবদ্ধতা ছাড়াই ‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কাজ চালিয়ে যাবে’।
অন্যদিকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাপন্থি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, ‘অর্থহীন’ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিন্দা করেছে।