স্টাফ রিপোর্টার:
গ্যাস বিদ্যুত,চাল,ডাল,তেল,আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সার,ডিজেল,কৃষি উপকরণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্দির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার দাবীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রা কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
শনিবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল চারটারদিকে শহরের শাহমোস্তফা সড়কে টাউন ঈদগায়ের সামন থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহনে এ পদযাত্রার কর্মসূচী পালন করে জেলা বিএনপি।
এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী ও প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান।
পদযাত্রার শুরুর আগে বিকেল তিনটা থেকে ঈদগাহর সামনে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেলা ছাত্রদল,জেলা যুবদল,জেলা কৃষকদল,জেলা স্বেচ্ছাসেবকদল জেলা মহিলা দল,জেলা শ্রমিকদল,সদর উপজেলা বিএনপি,পৌর বিএনপি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা নানান স্লোগানে মুখরিত করে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন।
সেখানে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ফয়সল আহমদ ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.ফখরুল ইসলামের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত পথ সভায় বক্তব্য দেন-বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী,মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন,কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি ও জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল।
সমাবেশ শেষে প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী,মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান এর নেতৃত্বে পদযাত্রাটি শহরের প্রেসক্লাব মোড় ও চৌমুহনা পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে এম সাইফুর রহমান সড়কে গিয়ে শেষ হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনামুল হক চৌধুরী বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি আজকে মিথ্যা মামলায় বন্দি অবস্থায় আছেন। বিদেশের চিকিতসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য আছেন। তাঁর মুক্তির জন্য এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার জন্য সারা দেশের জনগন তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই-আওয়ামীলীগের মন্ত্রীরা যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে বেগম জিয়াকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে। কেউ বলে উনি রাজনীতি করতে পারবেন, কেউ বলে উনি রাজনীতি করতে পারবেন না। কেউ বলেন উনি জেলের ভেতরে আছেন, কেউ বলেন প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় বাসায় আছেন। তাদের এসব কথা বাংলাদেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, টাকা পাচার করে আওয়ামীলীগ এ রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে ফোকলা করে দিয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশকে একটি মজবুত অর্থনীতি রেখে গিয়েছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাভলম্বী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র তৈরি করেছিলেন। অপরদিকে আজকে যারা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা আজ রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়া তৈরি করেছে। সুইজারল্যান্ড,কানাডায়, আমেরিকায় ও দুবাইয়ে বাসাবাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স করেছে। আমার ভয় হচ্ছে- শ্রীলংকায় যেরকম মন্ত্রীদের ধরে ধরে মুরগী জবাই করেছে;সেরকম তাদের সাথেও বাংলাদেশের জনগন করে কি না। সামনে দিন আসছে-জনগণ এই অবৈধ সরকারকে বাধ্য করবে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য। এবং ভোটের অধিকার,গনতন্ত্র ফিরে আনার জন্য তত্বাবধায়ক সরকার পূর্নবহাল করবে। আগামী নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে বলৈ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন- এই অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকার আজকে চালের দাম কোথায় নিয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ বলেছিল ১০টাকায় কেজি দরে চাল খাওয়াবে। এখন সেই চাল ৭০, ৮০, ৯০ টাকায় খাওয়াচ্ছে। বাজারে তেল,ডালসহ সমস্ত জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। দেশের মানুষ আজ দিশেহারা। সামনে রোজার মাস আসছে। দ্রব্যমূল্যের সব কিছুই উর্দ্ধগতি অবস্থায় আছে। যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের দিনমজুর ভাইরা কস্টে আছে। শ্রমিক ভাইরা কস্টে আছে। এ অবৈধ সরকারকে আরও যতদিন ক্ষমতায় থাকবে দেশের মানুষকে ঋণে জর্জরিত করে পথে বসাবে। না খেয়ে মারবে। বিদ্যুত গ্যাস তেল সহ দ্রব্য মূল্যের দাও আর বাড়াবে।
প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বলেন- দেশের জনগনের ম্যন্ডেটবিহীন এই নিশীরাতের ভোটের এই অবৈধ সরকারকে আর সরকার বলা যাবে না। এর মাস্তানি করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তাদের সরকার বলা হলে সরকার নামের অবমানননা হবে।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে তিনি রসিকতা করে বলেন-আমরা এখন সরকারকে আপাতত:চমুচা সিঙ্গারা আলুর চপ খাওায়াচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যে ইনাদেরকে পোলাও রিয়ানি খাওয়ানো হবে। এর পর ঝাল খাওয়ানো হবে। এই ক্ষমতাদখলদার নেত্রী ১৯৯৫/৯৬ সালে ১৬৫দিন হরতাল করেছিলেন তত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের জন্য। আর তত্ববধায়ক সরকার যখন বিএনপি ৬ষ্ট পার্লামেন্টে পাশ করলো। তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন এ ব্যবস্থা যেন চিরকালের জন্য থাকে। এর পর তার দল আওয়ামীলীগ পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে তিনি একাই এ ব্যবস্থা বাতিল করেন। যাতে কারচুপির নির্বাচন করে তাঁর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারেন। আজকে ১৪ বছর ধরে দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় আঁকড়ে আছেন। জনগনের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। মানুষের প্রতিবাদের ভাষা বন্ধ করেছেন। এই অবৈধ সরকারকে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করা দেশের মানুষের ঈমানী দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন- আমরা ১০ দফার আন্দোলন করছি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দাবী হচ্ছে- দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে আর নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
নাসের রহমান আরও বলেন- এ গণবিরোধী,গনবিচ্ছিন্ন ক্ষমতাদখলদার অবৈধ সরকারের পতনে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচী আসছে। কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো নেতাকর্মীদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একমাত্র পুলিশ ছাড়া শেখ হাসিনার পাশে আর কেউ নেই। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য বলেন- পুলিশসদস্যদের সাবধান করে দিতে চাই। সময় এসে গেছে-দেশের মানুষের ভাষা বুঝেন। পুলিশ কোনো দলের না। রাস্ট্রের। আপনারা জনগনের সাথে রাস্ট্রের পুলিশ বাহিনীর মতো আচরনের অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পর যখন এই স্বৈরাচারের পতন হবে তখন কারো ক্ষমা হবে না। জনগনের নির্বাচিত সরকারের কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক,আশিক মোশাররফ,মো.হেলু মিয়া,বদরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিসবাউর রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম রিপন, জেলা বিএনপির সহ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক দলের সভাপতি শামীম আহমদ,জেলা বিএনপির প্রবাসী কল্যান সম্পাদক নুরুল ইসলাম,প্রচার সম্পাদক মো.ইদ্রিস আলী, জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারুফ আহমেদ,জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান,মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ রশিদ, জেলা মহিলা দলের নেত্রী শ্যামলী সূত্র ধর,বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ আহমদ,রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.জিতু মিয়া,মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান নিজাম,সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউর রহমান,জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আসকর,কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি,কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল জলিল জামাল,শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী,সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন, সদর থানা যুবদলের আহবায়ক হাফেজ আহমদ মাহফুজ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আমির মোহাম্মদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হাই পিপলু, সদর থানা ছাত্রদলের আহবায়ক সৈয়দ জাবেদ আলী নাঈম ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক জনি আহমদ সহ আরো অনেকে।