স্টাফ রিপোর্টার:
বিস্তৃর্ণ হাইল হাওরের দক্ষিণ তীর এটি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাওর তীরবর্তী গ্রাম উত্তরসূর। এই গ্রামেই কৃষি বিপ্লবের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই শীতের মৌসুমে সবজি চাষাবাদ করে সফলতার মুখ দেখেছে একটি খামার। লাভের মুখ দেখায় এখন তাদের পরিকল্পনা খামারটি সম্প্রসারণ করা।
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসূর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাইল হাওরের তীরের গ্রাস উত্তরসূরে গড়ে উঠেছে কাজী এন্ড আজাদ এগ্রো ফার্ম। প্রায় আট একর জমির মধ্যে এই খামার গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তা কাজী আয়েশা। সেখানে এবার চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন রকম শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী সাফল্য এসেছে লাউ চাষ করে। খামারটির চারপাশে এখন লাউ এর ছাউনিতে ঘেরা। পাশাপাশি চাষ করা হয়েছে লাল শাক, কলমি শাক, বেগুনসহ বিভিন্ন শাক সবজি। যা বাণিজ্যিকভাবে যাচ্ছে পাশ^বর্তী বাজারগুলোতে।
শুধু সবজিই নয় কাজী এন্ড আজাদ এগ্রো ফার্ম পরিকল্পিতভাবে রোপন করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, আনার, পেয়ারার গাছ। আধুনিক পদ্ধতিতে রোপন করা হয়েছে বরই গাছ ও মরিচের গাছ। যেগুলো থেকে ইতিমধ্যে ফল তুলে বাজারে পাঠানো হয়েছে।
খামারের মধ্যখানে আছে একটি পুকুর। যেখানে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়া ডেইরি ও ক্যাটেল ফার্ম তৈরির জন্য একটি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েকমাসের মধ্যে এখানে তুলা হবে প্রায় ৪০টি গরু। সবমিলিয়ে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন এই খামার আশার আলো দেখিয়েছে।
কাজী এন্ড আজাদ এগ্রো ফার্ম সূত্রে জানা যায়, লাউয়ের পাতা সবুজ ও নরম। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল যথাক্রমে রোপণের ৪২-৪৫ দিন এবং ৫৭-৬০ দিনের মধ্যে ফুটে। প্রতিটি ফলের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। প্রতি গাছে গড়ে ১০ থেকে ১২টি ফল ধরে। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়। লাউ প্রধানত শীত মৌসুমের। শীতকালে ফলন বেশি আসে। শীতকালীন চাষের জন্য ভাদ্রের প্রথমে আগাম ফসল হিসেবে চাষ করা যাবে। তিন একর জমিতে লাউ চাষের জন্য মাচা থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা। কয়েকমাসের এক লক্ষ আশি হাজার টাকার লাউ বিক্রি হয়েছে। সব ফসল অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন ও দুধ বিক্রির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সাথী ফসলের লভ্যাংশ থেকেই নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লীষ্টরা।
খামারের পরিচালক কাজী মামুন বলেন, আমাদের খামারটা চালু হয়েছিল এক বছর হয়ে গেছে। এরপর শীতকালীন সবজি চাষাবাদ শুরু করি। খামারের সাথী ফসল হিসেবে আমরা এগুলো চাষা শুরু করি। এখানে বাণিজ্যিকভাবে কৃষি পণ্য উৎপাদনের কোন উদ্যোক্তা আগে ছিলেন না। আমরা আসা যাওয়া করতাম এরপর প্লান আসে এখানে একটি খামার করার। ছোট করে শুরু করেছিলাম এখন অনেক বড় হয়েছে। এই খামার নিয়ে আমাদের অনেক বড় পরিকল্পনা আছে।
তিনি বলেন, কম সময়েই খামার লাভের মুখ দেখছে ছোট ছোট গাছেও আম এসেছে। ছোট ছোট বরই গাছে বরই ধরেছে। ফলের ওজনে গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। মাটি ভাল থাকায় ফসল ভাল হচ্ছে। লাউ চাষাবাদ করেও দিগুনের বেশি লাভ হয়েছে। মাছ থেকেও লাভ হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, আমরা নতুন নতুন এলাকায় সবজি চাষের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন নতুন জমিতে আবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছি।