ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
একই গাড়িতে চড়েছিলেন তারা তিনজন। গন্তব্য ছিল একই। কিন্তু পথছুট হয়ে গেলেন দুজন। ফলে তিনজনের পথ এখন তিন দিকে।
দুজন রাস্তা হারিয়ে চোখের জলে বিদায় নিয়েছেন। তাদের মিশন আনফিনিশড। তাদের স্বপ্নভঙ্গে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ কোটি ভক্তের। একজন এখনও ছুটছেন গন্তব্যের পথে। যেটা তার স্বপ্নের গন্তব্য। যেখানে পৌঁছাতে তাকে পাড়ি দিতে হবে কণ্টকাকীর্ণ পথ, বিরুদ্ধ স্রোত আর কাঁটা বিছানো একেকটি স্তর। এই পথ অতিক্রম করার সময় তার কাঁধে রয়েছে অজুত নিজুত চাপ।
রাজার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট চাই-ই চাই। অমরত্বের স্বীকৃতি পেতে হলে সেই মুকুট জিততে হবে। পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্ত, সমর্থকদের স্বপ্ন পূরণের চাপ। নিজের শিরোপা খরা কাটানো, ৩৬ বছরের আলবিসেলেস্তেদের অপেক্ষার অবসান, আরও কত কী? ভিন্নগ্রহের ফুটবলার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া লিওনেল মেসির ছোট্ট কাঁধ কি এত চাপ সামলাবে? মেসিকে পারতেই হবে। কারণ কাতার বিশ্বকাপে সব খসে পড়া তারার ভিড়ে টিকে আছেন মেসি নামক ধ্রুবতারাটাই।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়র; বর্তমান সময়ের ফুটবল মাঠের তিন অমূল্য রত্ম। যাদের পায়ের জাদুতে বিশ্ব দোল খায়। পৃথিবী ওলট-পালট হয়। অথচ কাতার বিশ্বকাপ এই ত্রয়ীর জন্য হতে যাচ্ছে দাঁড়ি টানার মঞ্চ। জাতীয় দলের জার্সিতে তাদের হয়তো দেখা যেতে পারে। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে,বিশ্বকাপ আসরে, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে এটিই হতে যাচ্ছে তাদের শেষ পদচারণা।
এই পদচারণায় এখন কেবল টিকে আছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর মেসি। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছেন নেইমার। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে ব্রাজিল ধরেছে বাড়ির পথ। একদিন পর একই পরিণতি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। দুর্বার মরক্কোর কাছে নির্ধারিত সময়ে হেরে চোখের জলে নীরবে প্রস্থান করেন রোনালদো। ব্রাজিল ও পর্তুগাল দুই দলই এবার শিরোপার জোর দাবিদার ছিল। কিন্তু শেষ আটের বাধা অতিক্রম করতে পারেনি।
সেখানে মেসির দল আর্জেন্টিনা সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচ হারের পর প্রতিটি ম্যাচ নক আউট মনে করে খেলে বাজিমাত করে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। সামনে তাদের কেবল দুই ম্যাচ। মেসির দুটি বাধা ডিঙানোর পালা। সেমিফাইনালে তাদের হারাতে হবে ব্রাজিলকে বিদায় করা ক্রোয়েশিয়াকে। লুকা মদরিচের দল গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ। এবারও অভাবনীয় পারফরম্যান্সে মদরিচ, পেরিসিচরা শেষ চারে চলে এসেছেন। শিরোপার পথে এগিয়ে যেতে চাইবেন তারাও। এজন্য মেসি, ডি মারিয়াদের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।
আগের দিন মেসির সতীর্থ গোলরক্ষক মার্তিনেজ জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনার জন্য এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সিঁড়ি হতে যাচ্ছে। দেশের ৪৫ মিলিয়ন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এই শিরোপা জিততে চান মার্তিনেজ। বলার অপেক্ষা রাখে না, মেসির এই চ্যালেঞ্জটাই সবচেয়ে বেশি।
যার পায়ের জাদুতে গোটা দুনিয়ার অর্ধেক বিমুগ্ধ। যার একটি গোলে দুনিয়া কাঁপে। তার হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি দেখতে চাইবেন না কে? গত বছর কোপা আমেরিকা জিতেছিলেন মেসি। ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়েছে তার দল। বিশ্বকাপ যদিও সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রতিযোগিতা। যে প্রতিযোগিতায় ২০১৪ সালে ফাইনাল খেলেছিলেন মেসি। কিন্তু সেবার জার্মানির কাছে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর ট্রফি শোকেসে তার; কার্যত সমস্ত ট্রফিই রয়েছে। তাই মেসি ভক্তদের আশা দেশের হয়ে শেষ বিশ্বকাপে ট্রফিটা জিতুন এই মহাতারকা।
ম্যাচের পর ম্যাচ, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলেছেন ত্রয়ী। মুগ্ধতা ছড়ানো তাদের ফুটবল জ্ঞান, অসাধারণ তাদের ক্ষিপ্রতা, ড্রিবলিংয়ে তাদের ঐশ্বরিক প্রতিভা। তবুও ত্রয়ীর চিরকালীন শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। নেইমার ও রোনালদো নামের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়েই বিদায় নিয়েছেন। মেসির সুযোগ আছে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। নয়তো গোটা বিশ্বকেই হাহাকারে থাকতে হবে। সেই হাহাকার কি এবার মিটবে কাতার বিশ্বকাপে?