ফটোনিউজবিডি ডেস্ক:
পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক ব্যর্থতা দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন। বুধবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়া সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।
বাংলাদেশে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন দেশটির এই সেনাপ্রধান। এসময় তিনি বলেন, এমন একটি বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করছেন, যা বেশিরভাগ মানুষই এড়িয়ে যান।
পাক সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি কিছু তথ্য সংশোধন করে দিতে চাই। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) আলাদা হয়ে যাওয়া সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।’
তিনি বলেন, পাকিস্তানের লড়াইরত সৈন্যের সংখ্যা ৯২ হাজার নয়, বরং ৩৪ হাজার ছিল। বাকিরা সরকারের বিভিন্ন দফতরের ছিলেন। এই ৩৪ হাজার সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর আড়াই লাখ সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর ২ লাখ সদস্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
কামার জাভেদ বাজওয়া বলেন, এসব কঠিন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের সেনাবাহিনী সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছে এবং অনুকরণীয় ত্যাগ স্বীকার করেছে; যা ভারতীয় সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেকশ স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর এই আত্মত্যাগকে পাকিস্তান এখনও স্বীকৃতি দেয়নি; যা মহা অন্যায়। বাজওয়া বলেন, ‘এই সুযোগে আমি আত্মত্যাগ করা সৈন্যদের অভিবাদন জানাই এবং তা অব্যাহত রাখব। তারা আমাদের বীর এবং তাদের জন্য জাতির গর্ব করা উচিত।’
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ছয় বছর নেতৃত্ব দেওয়ার পর চলতি মাসের শেষের দিকে অবসর যাচ্ছেন জেনারেল বাজওয়া। ২০১৬ সালে তিন বছর মেয়াদের জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সংসদে সেনাপ্রধানের মেয়াদ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে তার মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানো হয়েছিল।
বিদায় বেলায় পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের দীর্ঘদিনের গোপন সত্য স্বীকার করে নিয়েছেন দেশটির এই জেনারেল। তিনি বলেছেন, সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে রাজনীতিতে বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর করবে না।
৬২ বছর বয়সী জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রতিবেশী ভারতের সেনাবাহিনী তাদের জনগণের সমালোচনার শিকার হয় না।
তিনি বলেন, ‘আমার মতে, এর কারণ হলো গত ৭০ বছর ধরে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ক্রমাগত হস্তক্ষেপ, যা অসাংবিধানিক। তাই, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে, সামরিক বাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’
জেনারেল বাজওয়া বলেন, সামরিক বাহিনী তার ‘ক্যাথারসিস’ বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে বের হতে শুরু করেছে। আর এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোও ‘তাদের আচরণের আত্মবিশ্লেষণ করবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো— পাকিস্তানে সামরিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ সবাই ভুল করেছে। আর এটাই সময় আমাদের তাদের কাছ থেকে শেখার এবং এগিয়ে যাওয়ার।’ বাজওয়া পাকিস্তানের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং দেশের সকল অংশীদারকে তাদের অহংকার দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।
সূত্র: ডন।