স্টাফ রিপোর্টার:
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত। উঁচু নিচু পাহাড়ি এলাকা জুড়ে আবাদ সিলেটের বিখ্যাত এই সবুজ কমলার। মান এবং স্বাদে অনন্য সু-মিষ্ট রসালো এই কমলার সুনাম দেশে বিদেশে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবুজ কমলার সন্ধানে ছুটে আসেন লোকজন। এই কমলা সবার কাছে পরিচিত সিলেটের সবুজ কমলা। উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লাঠিটিলা, লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, ডোমাবাড়ী, কচুরগুল এলাকায় সবচেয়ে বেশি হয় কমলার আবাদ।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে কমলার আবাদ হয় ১৭৭ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে জুড়ী উপজেলায় আবাদ হয় ৯৬ হেক্টর জমি।
স্থানীয় কমলা চাষীদের অভিযোগ দিন দিন কমছে কমলার উৎপাদন। তীব্র খরা ও বিষাক্ত পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে কমলার ফলন কমে যাচ্ছে। তবে এবার তীব্র খরার কারণে কমলার ফুল ঝরে যায়। এতে বিগত বছর থেকে কমলার উৎপাদন এ বছর অনেক কম হয়। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে দেশে লেবুজাতীয় ফসলের সংকট মোকাবেলা করতে ও বিদেশ থেকে আমদানি রোধ করতে কমলা উৎপাদনে কাজ করছে অধিদপ্তর। স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসে সঠিক নিয়ম পর্যবেক্ষণ করে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে তারা।
কমলা চাষি জয়নুল মিয়া জানান, বর্তমান সময়ের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্য কমলা চাষের মতো পেশায় সময় দিয়ে এখন আগের মতো জীবিকা চলে না। যার জন্য কমলার উৎপাদন দিন দিন কমছে।
কমলা চাষী জসিম উদ্দিন বলেন, যখন কমলা গাছে ফুল আসে তখন গাছে পানির প্রয়োজন হয়। এবার সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং সেচ দিতে না পারার কমলার ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ মূল সমস্যা প্রকৃতিক খরা। কোন ভাবে সময়মত সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে ফলন ভালো হবে আমি আশাবাদী। প্রতি বছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হলেও এবছর কমলা চাষে যা খরচ হয়েছে তা উঠবে না। ফলে আমরা কমলা চাষিরা পড়েছি দ্বিধায়।
কমলা হারবেস্টিং শ্রমিক দুদু মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি কমলার বাগান রয়েছে। আমি প্রায় ১৫ থেকে ১৬বছর ধরে কমলা মৌসুমে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। এ বছরের মত এত খারাপ ফলন আর দেখিনি।
হায়াছড়া এলাকার কমলা চাষী জামাল মিয়া বলেন, এবছর মৌসুমের শুরুতেই পানির অভাব দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হয় নি। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কমলার ফলন অর্ধেক কম। গাছে যখন কমলার মুকুল আসে, ফুল দেয় তখন সেচের খুব প্রয়োজন হয়। বড় বড় পাহাড়ে ওই সময় আমরা সেচ দিতে পারি না। সঠিক সময়ে সেচের অভাবে কমলা ঝরে পড়ে। এ বছরের ফলনে আমরা চাষীরা খুবই হতাশাগ্রস্ত।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা জসিম উদ্দিন বলেন, এখানে মূলত খাসি ও নাগপুরি জাতের কমলার আবাদ হয়। কৃষি বিভাগের লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় নতুন করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সার ও চারা প্রদান এবং স্প্রে মেশিন প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন বাগান করা হচ্ছে। এখানে বারি-১ বারি-২ ও দার্জিলিং জাতের কমলার জাত গুলো এ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি কৃষকর আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, খরার কারণে এবছর অন্য বছরের তুলনায় ফলন কম হয়েছে। আমরা কৃষকদের নতুন বাগান করার ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছি। তবে সাফারি পার্কের কারণে তাদের মধ্যে কিছুটা অনিহা কাজ করছে। আমরা কৃষকদের বলেছি সরকার এখানে সাফারি পার্ক করলে আপনাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিবে। যতদিন এখানে সাফারি পার্ক না হচ্ছে ততদিন আপনারা বাগানে পরিচর্চা করেন।