স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির সিলেটের গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির উপদেষ্ঠা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামীলীগ উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলে দেশকে দুর্নীতির জোয়ারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। এই দেশে জনগণের সরকার নেই। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল, বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আজকের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে, কেন বলতে হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই,দেশে ভোটাধিকার নেই।
বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের রেস্ট ইন হোটেলের কনফারেন্স হলে আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সারাদেশের বিভাগীয় পর্যায়ে দশটি গণ সমাবেশ করছে। এর মধ্যে সিলেটের গণসমাবেশ সাত নম্বর। এরইমধ্যে পাঁচটি সমাবেশ হয়েছে। আপনারা দেখেছেন প্রত্যেকটি সমাবেশ সফল। লক্ষ লক্ষ লোক। তারা কেন এসেছে, একটি মাত্র কারণ। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তারা কেন এসেছে, তারা এদেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পূন:প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, গনতন্ত্রের কথা ছিল এক নম্বরে। আরেকটা দুই নম্বর কথা ছিল, সেটা ছিল এ দেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আজকে দেশে কি অবস্থা হয়েছে, গুটি কয়েক মানুষ ও একটি গোষ্ঠি শোষণ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, বাংলাদেশ হওয়ার পর আমরা কি দেখলাম, আওয়ামীলীগ এসে সবকিছু রাষ্ট্রীয়করণ করলো। রাষ্ট্রীকরণের নামে দলের যারা নেতা আছে তারা সবকিছু দখল করলো। গণতন্ত্র- একদিনের সংসদে এগারো মিনিটের ব্যবধানে সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল কায়েম করলো। এটা কি রকম কথা, যে গণতন্ত্রের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিলো। স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় সেই গণতন্ত্র গায়েব হয়ে গেলো। যদি গণতন্ত্র নাই থাকে। তাহলে কেন আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করলাম। এই কথাগুলো আজকে নতুন প্রজন্মেকে বলতে হবে জানতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশের গণতন্ত্র নাই। ভোটের অধিকার নেই। দ্রব্যমূল্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দিশেহারা মানুষ। দরিদ্র মানুষ কি চায়, তারা কি লক্ষ লক্ষ টাকা চায়?। তারা পেট ভরে তিনবেলা ভাত খেতে চায়। দরিদ্র মানুষ চায় পাঁচ বছর পরে স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচিত করবে। একসময় আওয়ামীলীগ তো নিজেই বলতো, আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব। আজকে তারা এটা বলে না কেন?। এখন আওয়ামীলীগ বলে, আমার ভোট আমি দিব-দিনের ভোট রাতে দিব। এখন দিনের ভোট রাতে দিলে তো, ভোটের অধিকার তো আর মানুষের থাকে না‘ বলে যোগ করেন তিনি।
গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আজকে বিএনপি আন্দোলন করছে; দ্রব্যমূলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য। সেই আন্দোলন করতে গিয়ে আমার দলের সাত জন ভাইকে শহীদ হতে হয়েছে। সেই কারণে সারাদেশের সর্বস্তরের ক্ষুব্দ মানুষ আজ বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
তিনি দলের নেতাদের বলেন,নেতৃত্ব এখন আর আমাদের মতো আর আপনাদের মতো কোন নেতার হাতের মধ্যে নেই। নেই কেন এরই মধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের চেয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এখন কমপক্ষে একশো মাইল সামনে এগিয়ে আছে। যদি তাই না হতো, আমরা তো কাউকে চারদিন আগে বরিশালে আসতে বলি নাই। আমরা তো কাউকে তিনদিন আগে আসতে বলি নাই। ভেঁলায় পারি দিয়ে তাঁবু নিয়ে চাল ডাল তরি তরকারি নিয়ে আসতে বলি নাই। চুলা নিয়ে রান্না করে খেলা মাঠের মধ্যে খেতে তো বলি নাই। মনের তাগিদে তারা এসেছে। গনতন্ত্র ও ভোটাধিকার আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে এসেছে। আমরা যেটা চেয়েছি, তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অনেক সামনে এগিয়ে আসছে। সুতরাং আমরা যারা নেতৃত্বে আছি আমরা যেন সতর্ক হই। যারা যেখানে দায়িত্বে আছেন তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
তিনি নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন-পেছনে পরে গেলে অলঙ্কার হিসেবে যে পদ আছে, সেটা থাকবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। যতরকমের প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন, সবকিছু অতিক্রম করে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগকে সরাতে হবে। না হলে এদেশের গণতন্ত্র-সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল ভাবাদর্শ ছিল- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার, সেটাকে সরকার খেয়ে ফেলেছে। খেয়ে ফেলেছে বলেই আজকে তারা এতটা ভীত হয়েছে। ভয়ে ভয় পেয়েছে, যে কারণে যা খূশি তাই বলছে। বেগম খালেদা জিয়াকে নাকি আবার কারাগারে নিয়ে যাবে। গোটা বাংলাদেশটাই তো একটা কারাগার। কারাগারের বাহিরে আমরা কেউ নেই। গণভবন, বঙ্গভবন ও আওয়ামীগের সান্ডা পান্ডারা ছাড়া বাকি সমস্ত মানুষই তো আজ কারাগারে। যা মনে চাচ্ছে তারা সেটা করছে। আমরা তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। এই অবস্থায় চলতে দেয় যায় না‘।
গণ সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, সরকারের শত বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সারাদেশে বিএনপি গণসমাবেশে যেভাবে ট্রেনে, নৌপথে, পায়ে হেঁটে সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকে এই শেখ হাসিনা সরকারের গদিকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। সিলেটের সমাবেশেও মৌলভীবাজারের পক্ষ থেকে বিশাল গণ সমাবেশে দলে দলে যোগ দিয়ে মহাসমাবেশের রূপ দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতায় রাখা যাবে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে‘।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ হিটলারের প্রেতআত্মা। এই আওয়ামীলীগ ১৬৪ দিন দেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে গাল চিপে ধরে চিটাগাং পোর্ট বন্ধ করে দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের জন্য জ¦ালাও পোড়াও লগি বৈঠার আন্দোলন করেছিল। এই তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে, আওয়ামীলীগ দেশেকে অচল করেছিল। সেদিন দেশকে রক্ষা করার জন্য বেগম জিয়া তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ষষ্ঠ সংসদে পাশ করেন। অথচ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে এই পদ্ধতিকেই বাতিল করলো। এখন তারাই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দিনের ভোট রাতে করছে। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। যত বাধাই আসুক তা পেরিয়ে দলের সকল নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী ১৯ নভেম্বরের সিলেটের গনসমাবেশে সফল করতে।‘
জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জিতু মিয়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া সফি, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আসকর, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান নিজাম, জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রসিক।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বদরুল আলম, মো. হেলু মিয়া, ফয়ছল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বকসি মিছবাহউর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম রিপন, প্রচার সম্পাদক মো. ইদ্রিছ আলী, জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আহমেদ, জেলা আইনজীবি ফোরামের সভাপতি এড. মামুনুর রশীদ, মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি অলিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ রশীদ, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক শামীম আহমদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ মুহিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জিএম মুক্তাদির রাজু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, জেলা ওলামাদলের আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুল হেকিম, জেলা মহিলাদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাছরিন বেগম, প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া রহমান ইতি, সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিয়া সুলেমান কলি, জেলা জাসাস সভাপতি রাসেল আহমদ সহ বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।