নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্বমূলক এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠিত হওয়া উচিত। সেটা হতে হলে একটি নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন প্রয়োজন। সেখানে ভোটাররা গিয়ে নির্বিঘ্নে নিজ পছন্দ অনুযায়ী ভোটে দিতে পারবে। এই সকল কর্মকাণ্ডে আমরা আপনাদের (রাজনৈতিক) সকলের সহায়তা চাচ্ছি। একসাথে কাজ করতে চাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সংলাপের সময় সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
সংলাপে দলটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মুকিতের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনটা কিন্তু হেলাফেলার বিষয় নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শাসক দল নির্বাচিত হবেন এবং তারা সরকার গঠন করবেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক একটি সংগঠন কেবিনেট সেটাকে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হবে। এটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি রাষ্ট্রীয় সংগঠন রাষ্ট্রের পলিসি নির্ধারণ করা-এগুলো দরকার আছে। কাজেই আমরা মনে করি নির্বাচনটি হেলাফেলা নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার- এরকম প্রস্তাবনা অন্যান্য দল থেকেও এসেছে। সাধারণত এগুলো পলিটিক্যাল বিষয়। আপনাদের দাবিগুলো সরকার জানবেন এবং আপনাদের দাবি বা প্রেসার কতটুকু- এগুলো সরকার কেউ বুঝতে দিবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। আগামীতে আরও বিস্তৃত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আমাদের চেষ্টা থাকবে এক আমরা এখন থেকে আলাপ পরামর্শ করছি। আমরা মনে করি সিসি ক্যামেরা প্রস্তাব যে আপনারা দিয়েছেন এটা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।’
দলটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আর এটাও খুব কমন- প্রায় প্রত্যেকটি সংলাপকে আমরা অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা, অর্থশক্তি, পেশি শক্তি-এই অভিযোগগুলো আমরা শুনেছি। প্রায় সকল দলই এসব কথা বলেছে। যেখানে আপনাদের বক্তব্যে একটা ঐক্যমত্য আছে। আমরা এই বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখব এবং পেশি শক্তি, অর্থশক্তি গোপনে ব্যবহার হয়। যদি প্রকাশ্যে পেশি শক্তি আমাদের চোখে পড়ে, আপনাদের চোখেও পড়ে কাজেই সেই বিষয়ে আমরা আপনাদেরও সহযোগিতা চাইবো যে পেশিশক্তি যাতে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে পোলিং স্টেশন গুলোতে নির্বাচন কমিশন শেষ সময় একা কাজ করবে না। সে সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিডিআর, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমনকি সেনাবাহিনীর ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে। এবং আমরা সেই লক্ষ্যই কাজ করব সকলের সহযোগিতায়।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আপনারা যে বক্তব্য সংশয় এবং আস্থাহীনতা রয়েছে সে বিষয়টা সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। আমাদের তরফ থেকেও আমরা ইভিএম নিয়ে আমরা চার মাস ধরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলাপ-আলোচনা রাখছি। সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমরা অন্ধভাবে ইভিএম নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে এর যে কিছু ভালো দিক আছে আর মন্দ দিকটা যে আপনারা বলছেন সেটা কিন্তু আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’
সিইসি বলেন, ‘যে দায়িত্ব নিয়েছি আইন ও সংবিধানের অধীনে সেই দায়িত্ব অনুযায়ী আমাদেরকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। আপনাদের সকলের সহযোগিতা নিয়ে। যে প্রশ্নটা আপনারা করেছেন- রাজনৈতিক দল যদি না আসে আমরা তাদেরকে বাধ্য করতে পারব না, এটা আমরা বারবার বলেছি। বাধ্য করতে না পারলেও আমরা বারবার তাদের অনুরোধ করে যাব। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হলে আমরা আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।’
দলটির উদ্দেশ্যে সিসি বলেন, ‘আপনাদেরকেও সরব হতে হবে এবং সবল হতে হবে। আমরা যেন সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে পারি। তাহলে আমরা আরও সফল হতে পারি। এটা আমাদের সকলের মিলিত প্রয়াস হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন, সেই পয়েন্টগুলো লিখে নেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব এর সব সমস্যার সমাধান করতে। আমাদের ইনস্ট্রাকশন থাকবে আমরা যে অভিযোগ বা সমস্যাগুলো শুনেছি সেগুলোকে এড্রেস করার চেষ্টা করতে হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত ডিজি মহোদয়কে এ বিষয়ে সাথে সাথে নির্দেশনা দেন তিনি।