হোসেন মিয়ার ঘরে খাওয়ার মতো কোনো তরকারী নেই। বাজারে গিয়েছে সবজি কেনার জন্য। কিন্তু কেনার মতো টাকা নেই তার কাছে। পাশের বাড়ির এক চাচার দু’কানে গিয়ে চাচার কাছে ১০০ টাকা সাহায্য চাইলো কোনো উপায় না পেয়ে। কারণ ঘরে স্ত্রীকে বলে গিয়েছে সবজি আনতে যাচ্ছি।
১০০ টাকা চাইলেও চাচা যেকোনো ভাবে মানা করে দেয়, হোসেন মিয়া আর টাকা পায় নি।
অসহায় চেহারা আর খালি হাত নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। ঘরে আসতেই স্ত্রী বললো -সবজি আনেন নি?
হোসেন মিয়া মাথা নেড়ে নিরব উত্তরে বুঝিয়ে দিলো তার অসহায়ত্ব। তখন স্ত্রী বললো? তাহলে খাবে কি? ভাত কি লবন দিয়ে খাবে?
হোসেন মিয়া বললো- আল্লাহই দিবেন, আল্লাহই খাওয়াবেন!
হোসেন মিয়া একটি এক্সিডেন্টে পা ভেংগে ৬ মাস ধরে বেরুজগার অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। পা এখনো ঠিক হয় নি। এজন্য খুব বেশী বের হোন না ঘর থেকে।
কিন্তু সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে এসে পড়বার চেষ্টা করে। পায়ের কারণে এখন কিছু অনিয়মিত আসে।
কিন্তু আজ হোসেন মিয়ার মন মাগরিবের নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়ার জন্য ছটফট করছে। তার মন তাকে টেনে নিয়ে এসেছে মসজিদে। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হতেই তার পাশের বাড়ির এক ভাতিজা বলে উঠলো- চাচা..আমার কাছে আপনার জন্য কিছু টাকা রয়েছে নিয়ে যাবেন।
চাচা আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো আর বলল চাচা কে দিলো টাকা?
ভাতিজা বললো- চাচা ২/৩ দিন আগে একটি মানবিক সংগঠন থেকে আমাকে কল দিয়ে বলেছে আপনার এলাকায় বন্যায় অসহায় জীবন যাপন করছে এরকম ২ জনের নাম দিন- আমরা কিছু আর্থিক সহযোগীতা দিব। সেখানে আমি আপনার নাম দিয়েছিলাম চাচা।
চাচা তখন উপরে উল্লেখিত বিস্তারিত ঘটনা ভাতিজাকে বলতে লাগলেন।
আর বললেন-ভাতিজা.. কষ্টের কথা বলাও যায় না সহ্য করতেও পারছি না। এই বন্যায় অনেকেই সাহায্য হিসেবে চিড়া, মুড়ি, চাল ইত্যাদি দিচ্ছে। কিন্তু চাল দিয়ে ভাত রান্না করে লবন দিয়ে তো খাওয়া যায় না। পরিবারে ২ টা বাচ্চা আছে, স্ত্রী আছে। একটু সবজি বা তরকারী তো লাগে।
আজকে এলাকার এক ভাইয়ের কাছে অভাবের কথা জানিয়ে মাছ চেয়েছিলাম। যার মাছের আড়ৎ আছে। সে কিছু মাছ পাঠিয়েছে। মাছের সাথে একটু সবজি হলে ভাল হতো এজন্য সবজির জন্য বাজারে গিয়েছিলাম, কিন্তু কিনতে পারিনি। তুমি এসে যখন টাকার খবর দিলে সত্যি অবাক হয়ে গেলাম আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম।
উল্লেখিত চাচার নামটি ছদ্মনাম। আসল নাম উল্লেখ করিনি অনেক কারণে। আর ভাতিজা চরিত্রের মানুষটি ( আবু সালেহ মোহাম্মদ নাঈম) হলাম আমি। এবং টাকার আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছিলেন এই বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানবিক সংগঠন Team-15 (টিম-১৫) এর সদস্য ও “জুড়ীরসময়ের” সম্পাদক আশরাফ আলী ভাই।
আসলে ভাই অল্প কিছু পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বিপদে এই অল্প টাকা কত অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটায়।
এরকম অনেক গল্প আছে যা আমরা জানি না বা আমরা সাহায্য না করার কারণে গল্পটাই তৈরী হয় না। শুকনো খাবার বা চাল, ডাল সাহায্যের পাশাপাশি নগদ অর্থ দেয়াটাও জরুরী।
লেখক: ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাঈম
পরিচালক, মৌসাস।